উপযোগ কাকে বলে?

উপযোগ

উপযোগ বলতে কোনো দ্রব্যের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বুঝায়। ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণে সর্বপ্রথম উপযোগ ধারণাকে ব্যবহার করেন। স্টেনলি জোন্স, লিওন ওয়ালরাস, কার্ল মেঞ্জার প্রমুখ অর্থনীতিবিদ উপযোগ তত্ত্ব বিশ্লেষণে ভূমিকা রাখলেও ১৮৯০ সালে অধ্যাপক মার্শাল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Principles of Economics’ গ্রন্থে ক্লাসিক্যাল উপযোগ তত্ত্বের একটি সুসংহত ব্যাখ্যা দেন।

উপযোগ

সাধারণ অর্থে ‘উপযোগ’ বলতে উপকারিতাকে বুঝালেও অর্থনীতিতে ‘উপযোগ’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে ‘উপযোগ’ বলতে কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বুঝায়। কাজেই বস্তুগত বা অবস্তুগত, ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন কোনো দ্রব্য যদি মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে তাহলেই ধরে নেওয়া হয় যে, তার উপযোগ আছে। যেমন-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, মদ, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি মানুষের অভাব মিটাতে পারে বলে এদের উপযোগ আছে। অর্থনীতিতে উপযোগের সাথে উপকারিতার কোনো মিল নেই। কেননা মদ, গাঁজা, হেরোইন, সিগারেট ইত্যাদি মানুষের উপকারে আসে না।

কিন্তু এসব দ্রব্যও সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের অভাব পূরণ করে থাকে। সুতরাং তাদের নিকট এসব দ্রব্যেরও উপযোগ আছে। তাই বলা যায়, কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। অধ্যাপক মেয়ার্সের মতে, “উপযোগ হলো কোনো দ্রব্যের সে গুণ বা ক্ষমতা যা মানুষের অভাব মিটাতে সক্ষম।”

উপযোগ সম্পর্কে ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের দীর্ঘ বিতর্কের প্রেক্ষিতে উপযোগ পরিমাপের প্রশ্নে দুই ধরনের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। অধ্যাপক মার্শাল ও তার অনুসারীরা উপযোগকে সংখ্যাগতভাবে বিশ্লেষণ করেন, পরবর্তীতে হিকস- এলেন উপযোগকে পর্যায়গতভাবে বিশ্লেষণ করেন। অতএব বলা যায় উপযোগ পরিমাপের পদ্ধতি দুই প্রকার। যথা- (১) সংখ্যাবাচক পরিমাপ এবং (২) পর্যায়গত পরিমাপ।

কোনো বস্তুর অভাব পূরণের ক্ষমতাকে ঐ বস্তুর উপযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে বস্তুর অভাব পূরণের ক্ষমতা যত বেশি সে বস্তুর উপযোগও তত বেশি। অর্থনীতিবিদরা উপযোগ পরিমাপের পদ্ধতিকে সংখ্যাবাচক ও পর্যায়গত শ্রেণীতে বিভক্ত করেন।