সুযোগ ব্যয় বা সুযোগ খরচ কি?

সুযোগ ব্যয়

অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদগণ উনিশ শতকের শেষ ভাগে এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে সুযোগ ব্যয় তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ এ তত্ত্বের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সীমিত উপকরণ দিয়ে কোন দ্রব্য কতটুকু উৎপাদন করা হবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ সুযোগ ব্যয় ধারণাটির অবতারণা করেন।

সুযোগ ব্যয়

উৎপাদন উপকরণের যোগান সীমিত। আবার উপকরণগুলোর বিকল্প ব্যবহার সম্ভব। যেমন-একই জমি ধান চাষের জন্য অথবা পাট চাষের জন্য ব্যবহার করা যায়। কিন্তু কোনো একটি দ্রব্য উৎপাদনে যেসব উপকরণ নিয়োগ করা হয় সেসব উপকরণ তৎক্ষণাৎ আরেকটি দ্রব্য উৎপাদনে নিয়োগ করা যায় না।  এমতাবস্থায় একটি দ্রব্য উৎপাদনের দরুন অন্য যেসব দ্রব্য উৎপাদিত হয় না, সমাজ সেসব দ্রব্যের ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটিই দ্রব্য উৎপাদনের সুযোগ ব্যয়। পাট চাষের পরিবর্তে ধান চাষ করার অর্থ হলো সমাজকে পাটজাত দ্রব্যের ভোগ থেকে বঞ্চিত করা। এটিই হলো ধান উৎপাদনের সুযোগ ব্যয়।

সুযোগ ব্যয়কে অনেকে হস্তান্তর ব্যয় বলেও অভিহিত করেন। প্রতিটি উপকরণ কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক পারিশ্রমিক অর্জন করতে চায়। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানে তার পারিশ্রমিক কম হলে ঐ প্রতিষ্ঠানে সে কাজ না করে অন্যত্র চলে যাবে। কোনো বিশেষ উপাদান নিয়োগের এটিই তার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় আয়। এ ন্যূনতম প্রয়োজনীয় আয়কে সুযোগ ব্যয় বা হস্তান্তর আয় বলে। সুযোগ ব্যয়কে নিম্নোক্ত উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়ঃ

মনে করি, কোনো জমিতে ধান চাষে ৫০ টাকা এবং পাট চাষে ৪০ টাকা আয় হয়। সুতরাং বলা যায় যে, জমিটির ধান চাষের বিকল্প ব্যবহার হলো পাট চাষ। ধান চাষে জমিটির সুযোগ ব্যয় বা হস্তান্তর আয় বা ন্যূনতম যোগান দাম ৪০ টাকা। ধান চাষে জমিটির আয় ৪০ টাকা থেকে বেশি হলে জমিটি ধান চাষে নিযুক্ত হবে এবং ধান চাষে জমিটির আয় ৪০ টাকা থেকে কম হলে জমিটি পাট চাষে নিযুক্ত হবে। সুতরাং কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে গেলে তার জন্য যে বিকল্প দ্রব্যের উৎপাদন ত্যাগ করতে হয় তা-ই দ্রব্যটির সুযোগ ব্যয়। একটি সমাজে সীমিত উপকরণের সাহায্যে কোন দ্রব্য কতটুকু উৎপাদন করা লাভজনক হবে তা সুযোগ ব্যয় রেখার সাহায্যে জানা যায়। তবে যেসব ক্ষেত্রে কোনো বিকল্প নেই, নিকটবর্তী অন্য কানো সুযোগ নেই, সেসব ক্ষেত্রে সুযোগ ব্যয় ধারণাটি কার্য্যত অচল হয়ে পড়ে।