শাহনামা বলতে কি বোঝ?

শাহনামা

শাহনামা মুসলিম চিত্রকলার ইতিহাসে সর্বাধিকবার চিত্রিত পান্ডুলিপি গুলোর মধ্যে অন্যতম। ইলখানী আমলে চিত্রায়িত ‘শাহানামা’র কপি ডিম্ট সংগ্রহে থাকায় ইহা ‘ডিমট শাহনামা’ নামে পরিচিত। এছাড়া সম্রাট আকবর ‍ও জাহাঙ্গীরের সময় অর্থাৎ মোঘল আমলে শাহনামা চিত্রাবলীর চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।

আদি শাহনামা

পারস্যের বিখ্যাত কবি আবুল কাশেম কোরেশী রচিত মহাকাব্য শাহনামা (বাদশাহদের গ্রন্থ) ফারসী ভাষার একটি অপূর্ব গৌরবোজ্জ্বল সাহিত্য কীর্তি। তার ঐতিহাসিক জ্ঞানকাব্য প্রতিভা গজনীর সুলতান মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

শাহনামা কাহিনী

সুলতান মাহমুদ কবি আবুল কাশেম কোরেশীকে ফেরদৌসি উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন। পারস্যের একখানা কাব্য ইতিহাস রচনার ভার সুলতান মাহমুদ তাকে দেন। সুলতান মাহমুদ কবিকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, প্রতিটি শ্লোকের জন্য তাকে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করবেন। মহাকবি ফেরদৌসি ৩৫ বছরে ৬০ হাজার শ্লোকে শাহনামা রচনা করেন। কবি ফেরদৌসি তার পারিশ্রমিক পাননি, কিন্তু মহাকাব্যের ইতিহাসে বিশ্বের সাহিত্যমোদী লোকদের উপহার দিয়েছেন এক অনন্য দৃষ্টি শাহনামা। পরবর্তীকালে এ শাহনামাই ইলখানী ও মোঘল আমলে চিত্রকলায় চিত্রায়িত হয়েছে।

চিত্রায়িত শাহনামা

পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হিরাতে দু’ধরনের শৈল্পিক ধারা আত্মপ্রকাশ করে-একটি পূর্ববর্তী রীতির পূনরাবৃত্তি করে ক্রমশ শিল্পচর্চার অবনতি হতে থাকে এবং অপরটি নতুন উপাদান এবং শৈল্পিক চাতুর্যে পুষ্ট হয়ে অভিনবত্ব প্রকাশ করতে থাকে। রয়েল এসিয়াটিক সোসাইটি সংগ্রহের ‘শাহনামা’ পাণ্ডুলিপি চিত্রাবলী হিরাতে ১৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে শাহরুখের পুত্র মুহাম্মদ জুকীর জন্য লিপিবদ্ধ ও চিত্রিত হয়। এ গ্রন্থে বাবুর থেকে আওরঙ্গজেব পযর্ন্ত সকল মুঘল সম্রাটের স্বাক্ষর ছিল। এ পাণ্ডুলিপির আকর্ষণীয় মিনিয়েচারগুলো হচ্ছে-

  • (ক) রুস্তম এবং তাহমীনার সাক্ষাৎ
  • (খ) সিমুর্গ জালকে তার পিতা সামের কাছে ফেরত দিচ্ছে ও
  • (গ) ভ্রমণকারী বীরগণ তুষার ঝড়ে পতিত।

শাহনামার প্রথম চিত্রটির সঙ্গে ফগ মিউজিয়ামের অনুরূপ শাহনামার মিনিয়েচার সাদৃশ্য থাকলেও রয়েল এসিয়াটিক সোসাইটির চিত্রটি শৈল্পিক সাফল্য অর্জন করেছে। রুস্তম ও তাহমীনার সাক্ষাৎকার ভারসাম্য ও বর্ণ বিন্যাস বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ। পারস্যের কাল্পনিক পাখ সিমুগ জালকে তার পিতার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এ দৃশ্যে পুষ্পিত গাছে ও লতাপাতা সম্বলিত উপত্যকায় বিচিত্র রঙের উপলখণ্ড দ্বারা পাহাড় দেখানো হয়েছে। খসুরু কয়েকজন সহচর সহ তুষার ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে বরফে আচ্ছদিত সমতল কার্পেটের উপর বসে প্রচণ্ড শীতে কাঁপছেন এরূপ দৃশ্য বাস্তবধর্মী পদ্ধতিতে শিল্পী অঙ্কন করেন। শীতের প্রকোপ ব্যক্ত করতে গিয়ে শিল্পী দেখিয়েছেন যে, কেহ নিজের হাত শরীরে জড়িয়ে আছেন, কেহ রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন; এমন কি ঘোড়ার মুখও কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে।

মহাকাব্য শাহনামা পাণ্ডুলিপি মুসলিম চিত্রকলার ইতিহাসে সর্বাধিক চিত্রায়িত হয়েছে। তাই শিল্পকলাকে সমৃদ্ধ করতে এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।