বার্লিন চুক্তি কি?

বার্লিন চুক্তি

১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেস তুরস্কের ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমেই তুরস্ক সাম্রাজ্য তার অনিবার্য্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। এ চুক্তির মাধ্যমেই রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী অগ্রগতি রুদ্ধ হয়

পক্ষান্তরে ইংল্যান্ডের সাম্রাজ্যবাদী ও বাণিজ্যিক স্বার্থ আশাতীতভাবে মজবুত হয়। ‘ইউরোপের রুগ্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে খ্যাত তুরস্ক ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পরে এ চুক্তির মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যের ভিত্তি আনুষ্ঠানিকভাবে মজবুত করে নেয়।

বার্লিন কংগ্রেস

১৮৭৮ সালের ১৬ জুন জার্মানির বার্লিন শহরে এক বৈঠকে অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, জার্মানি ও ব্রিটেন একত্রে মিলিত হয়ে এবং বহু আলোচনার প্রেক্ষিতে সানস্টিফানোর সন্ধি সংশোধিত করে যে নতুন সন্ধি স্বাক্ষর করে ইতিহাসে তাই বার্লিন কংগ্রেস বা বার্লিন চুক্তি নামে অভিহিত। জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্কের সভাপতিত্বে বার্লিনে এ বৈঠক আহূত হয়।

বার্লিন কংগ্রেসের ধারাঃ ১৮৭৮ সালের ১৬ জুন তারিখে বার্লিন কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। বার্লিন কংগ্রেসের চুক্তিতে উল্লিখিত ধারাসমূহ।

  • (ক) মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং রুমানিয়া তুরস্কের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে পরিগণিত হবে।
  • (খ) সানস্টিফানো সন্ধি দ্বারা স্বীকৃত বৃহত্তর বুলগেরিয়াকে তিন অংশে ভাগ করা হলো- ম্যাসোডোনিয়া, পূর্ব রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া। ম্যাসিডোনিয়া তুরস্ক সুলতানের অধীনে থাকল, বুলগেরিয়ার দক্ষিণাংশ রুমানিয়া নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করল। তবে সুলতানের অধীনে একজন খ্রিস্টান গভর্নর এ নতুন রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনা করবেন বলে স্থির হলো। অবশিষ্টাংশ বুলগেরিয়া নামে পরিচিত হবে এবং তুরস্কের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হবে।
  • (গ) তুর্কি সুলতান কর্তৃক রুমানিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হলো।
  • (ঘ) রাশিয়া পেল বেসারাবিয়া, বার্টুম, কার্স ও আর্মেনিয়ার কিছু অংশ এবং বেসারাবিয়ার ক্ষতিপূরণস্বরূপ রুমানিয়াকে দবরূজা ছেড়ে দিল।
  • (ঙ) ইউরোপের শান্তি বজায় রাখার জন্য বসনিয়া ও হারজেগোভিনাকে অস্ট্রিয়ার অধীনে রাখা হলো।
  • (চ) রাশিয়া যতদিন বাটুর্ম ও কার্স তার শাসনাধীনে রাখবে, ততদিন পযর্ন্ত সাইপ্রাস দ্বীপের শাসনভার ইংল্যান্ডের হাতে দেওয়া হলো। তুরস্ক সাইপ্রাস দ্বীপের উদ্বৃত্ত রাজস্ব পাবে।
  • (ছ) ভবিষ্যতে তিউনিস অধিকারের অনুমতি ফ্রান্সকে দেওয়া হলো।

বার্লিন কংগ্রেস তুরস্ক ও রাশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়। আর ১৮৫৬ সালের ইউরোপীয় গোষ্ঠী কর্তৃক তুরস্কের অখণ্ডতাকে মূলত অস্বীকার করা হয়। এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রাশিয়া। এছাড়া তুর্কি সুলতান সাম্রাজ্যের প্রায় অর্ধাংশ হারায়। বিসমার্ক এ ‍চুক্তিকে “শান্তির চুক্তি” বলে অভিহিত করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল “ইউরোপীয় স্বার্থের চুক্তি।”