ডার্ক ওয়েব গাইডলাইন

ডার্ক-ওয়েব
how to access the dark web featured new
image source : VPN overview

ডার্ক ওয়েব কে প্রায়ই ডিপ ওয়েব ভেবে বিভ্রান্ত হতে হয়, যে অংশ সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে অনুসন্ধান করা যায় না। এই বিভ্রান্তি কমপক্ষে ২০০৯ পর্যন্ত ছিল।তারপর থেকে, বিশেষ ভাবে সিল্ক রোডের উপর প্রতিবেদনের পর, দুটি বিষয়ই গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল,সুপারিশ সত্ত্বেও যে তারা আলাদা বিষয়।

ডার্ক ওয়েব – ডাব্লুএইচএসআর সম্পর্কিত অন্যান্য ইন্টারনেট গাইড

  • ডার্ক ওয়েব এ কিভাবে ইমেইল হোস্টিং কাজ করে
  • ডার্ক ওয়েব এ কিভাবে নিরাপদ সকেট স্তর (SSL) কাজ করে
  • ডার্ক ওয়েব এ কিভাবে একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করবেন
  • ডার্ক ওয়েব এ কিভাবে আপনি আপনার আইপি ঠিকানাটি কীভাবে গোপন করবেন

Google এর সক্ষমতা কতটুকু ?

google

ডার্ক ওয়েব এর বিপরীতে জেনে অবাক হয়ে যাবেন যে আপনি যখন কোন বিষয়ে সার্চ দেন আর গুগল তার লক্ষ লক্ষ ফলাফল আপনার সামনে হাজির করে তা ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র ১০ শতাংশ থেকে প্রাপ্ত! অর্থাৎ গুগল অনলাইনের মোট তথ্যের ৯০ শতাংশ জানে না! মাত্র ১০ শতাংশের মধ্যেই সার্চ দিয়েই সে তার ফলাফলকে গ্রাহকের সামনে হাজির করে। বাকি ৯০ শতাংশ চিরকালই আপনার অজানা থেকে যাবে।

ডার্ক ওয়েব এর এক জরিপে জানা গেছে দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডেটা সংরক্ষিত আছে তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশী ডেটা সংরক্ষিত আছে ডার্ক ওয়েব এ । প্রকৃতপক্ষে এই দৃশ্যমান নেট হল মহাসাগরে ভেসে থাকা এক খন্ড হিমবাহ আর ডীপ ওয়েব হল মহাসাগর খোদ নিজে !

এবার আসি সবচেয়ে মজার অংশে তথা ডার্ক ওয়েব …

maxresdefault 1

ডার্ক ওয়েব ব্যাতিত আপনার প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে এই সমস্ত সাইটে ঢুকতে পারবেন না। এরা ইন্টারনেটের সমস্ত প্রথার বাইরে অবস্থান করে, গ্রাহ্য করে না কোন নিয়মকানুন। আর এদের ঠিকানাও থাকে এতটাই উদ্ভট (যেমন sdjsdhsjhsuyumnsdxkxcoioiydsu67686hsjdhjd.onion) যে সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলো মনে রাখা ভীষণ কঠিন। এই অংশটিই ইন্টারনেটের প্রকৃত অদৃশ্য অংশ। বিশেষ কিছু জ্ঞান(যেমন প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, প্রক্সি) না থাকলে আপনি এই নেটওর্য়াকে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই অংশের আরেকটি বিশেষত্ব হল এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাইটগুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন (যেমন .com) ব্যবহার না করে “Pseudo Top Level Domain” ব্যবহার করে যা কিনা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে। এ ধরণের ডোমেইনের ভেতর আছে Bitnet, Onion, Freenet প্রভৃতি।

এই দুনিয়াটি সবচেয়ে আলাদা! আপনি জীবনে যা কখনো কল্পনা করেন নি তাই পাবেন এখানে। হয়তো কখনো কল্পনা করেন নি যে সাইটে পাসওর্য়াড বাদে ঢুকা সম্ভব, দেখবেন তাই এখানে অহরহ হচ্ছে। এমন বিষয় পাবেন যা আপনার মাথাও গুলিয়ে দিতে পারে। উইকিলিকস ঘোষণা করেছে যে এ বছর তারা আরো নতুন ডেটা প্রকাশ করবে, কিন্তু আপনিই হয়তো বিস্ময়ভরে দেখতে পারবেন উইকিলিকস এর এই সমস্ত ডেটা এই ডার্ক ওয়েবে আছে বেশ কিছু বছর আগে থেকেই। যেকোন বইয়ের একদম লেটেস্ট এডিশন যা কিনা সারফেস ওয়েবে কপিরাইট ল’এর কারণে নেই তা দেখবেন এখানে অহরহ আদান প্রদান হচ্ছে।

ডার্ক ওয়েব এ আরো আছে বিকৃতরুচির বিনোদোন! শিশু পর্ণোগ্রাফি থেকে শুরু করে নানা ধরনের Genital Mutilation এর ভিডিও যা কিনা সারফেস ওয়েবে নেই, তা এখানকার হট টপিকস।

ডার্ক ওয়েব ছাড়াও এমন কিছু সাইট আছে যেখানে মার্জুয়ানা, হিরোইন থেকে শুরু করে সব ধরণের মাদক হোম ডেলিভারী দেয়া হয়। ডার্কনেটের মূল ব্যবহারকারী মূলত মাদকাসক্তরাই।

আবার কিছু সাইট আছে যেখানে কট্টরপন্থী গ্রুপগুলো শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে গোলা বারুদ বানাতে হয়, কিছু সাইটেতো রেডিমেড অস্ত্রই বিক্রি হয়। এ-কে ৪৭ থেকে শুরু করে রকেট লঞ্চার, মর্টারের মত অস্ত্রও কিনতে পাওয়া যায়।

আরব-বসন্তের সময় বিপ্লবকারীরা এই ডার্কওয়েবে যোগাযোগ করত। ডার্কওয়েবে নানা ধরণের মেইল সার্ভিস, চ্যাট সার্ভিস আছে যেখানে পরিচয় গোপন রেখে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন।

বিস্ময় আরো আছে! বেশ কিছু দিন আগে আমি এমন এক আন্ডারগ্রাউন্ড সাইটে ঢুকি যেখানে টাকার বিনিমিয়ে কিলার ভাড়া পাওয়া যায়!!! কি ভয়ংকর, বিশ্বাস হচ্ছে না? আমারও তখন হয় নি। এমনই এক সাইটে ঢুকে দেখি কিলার তার নিজের সর্ম্পকে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেঃ

“ আমাকে তুমি স্ল্যাট নামে ডাকতে পার। আমি তোমার শত্রুকে প্রফেশনাল ওয়েতে শেষ করে দিতে পারব। আমি তার সাথে তোমার সমস্যা জানতে আগ্রহী নই। তুমি শুধু আমাকে টাকা দিবে আর আমি তাকে শেষ করে দিব। টার্গেটের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে, টার্গেট পুরুষ না মেয়ে তাতে আমার কিছু আসে যায় না,আমি গর্ভবতী মহিলাকে টার্গেট হিসেবে নেই না,আমি টার্গেটকে অত্যাচার করি না,টার্গেট যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হন তাহলে বাড়তি চার্জ লাগবে আর বাড়তি চার্জের বিনিময়ে আমি পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার মত করে সাজাতে পারব,ডাউনপেমেন্টের চার সপ্তাহের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের টার্গেটের জন্য বাড়তি ৫০০০ ডলার ট্রাভেল চার্জ লাগবে । কাজ হয়ে গেলে আমি তোমাকে টার্গেটের ছবি তুলে পাঠাব”।

মোটকথা আপনি এমনই এক ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রবেশ করবেন যেখানে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে দুবার ভেবে নিতে হবে। সারফেস ওয়েবে যেসব হ্যাকিং টেকনিক দেখতে পান তা হল এই ডার্ক ওয়েব থেকে ফাঁস হওয়া ১% তথ্যের অংশ বিশেষ। এখানকার হ্যাকাররা খুবই ভয়ংকর এবং প্রোগামিং এ তাদের কোন জুড়ি নেই, সাবধান আপনার ই-মেইল হ্যাক হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া সরকারের এজেন্টগুলোতো আছেই।

ডার্ক ওয়েব ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস আর্টিকেলটি পড়ুন এই লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে

কিন্তু প্রশ্ন হল এই সব নেটওর্য়াক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নাকের ডকা দিয়ে কিভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে???

এটা বুঝতে হলে আমাদের এইরকম একটি নেটওর্য়াক নিয়ে একটু চিন্তা করতে হবে…

Kettani Law Firm 1

ডার্কওয়েবে ব্যবহৃত নেটওর্য়াকের মধ্যে সারফেস ওয়েবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে এমন এক নেটওর্য়াক হল অনিয়ন নেটওর্য়াক। অনিয়নের Pseudo-top-level-domain হল .onion। আর এর সাইটগুলোর ঠিকানা ভূতুড়ে! মূলত মার্কিন নেভির জন্য তৈরী করা হলেও এই নেটওর্য়াক আজ বিশ্বব্যাপী ছদ্মবেশী নেট ব্যবহারকারীদের প্রথম পছন্দ। অনিয়নে আপনার ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে পারবেন না, এজন্য আপনাকে ডাউনলোড করতে হবে Tor ব্রাউজার।

টর আপনার পরিচয়কে লুকিয়ে ফেলবে আর এর ফলে কারো পক্ষে আপনার অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। আপনি যখন টর দিয়ে কোন সাইটে ঢুকতে যাবেন তখন টর আপনার এই রিকোয়েস্ট কঠিন এনক্রিপশনের মধ্য দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে পাঠাবে। অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার পাঠানো ডেটা আর ডেটা থাকে না, সেটা দুর্বোধ্য এক স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়।

এই ধরণের দুর্বোধ্য সিস্টেমের কারণেই এই সমস্ত নেটওর্য়াক সব সময়ই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনিয়ন নেটওর্য়াকে থাকা ব্ল্যাক মার্কেটগুলোর ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় হল Silkroad, ফোর্বসের হিসেবে এখানে গত বছর ২২ মিলিয়ন ডলারের বেচা-কেনা হয়েছিল। আর এখানে প্রচলিত মুদ্রায় বেচাকেনা হয় না, বেচাকেনা হয় Bitcoin নামক একধরণের ভার্চুয়াল মুদ্রাতে। মাইক্রোসফট, অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এখানে ৮০% পর্যন্ত ডিস্কাউন্টে পাওয়া যায়।

এতসব অনিয়মের ভেতরেও এই ধরণের ব্যবস্থাকে সমর্থন করি, কেন? একটি উন্মুক্ত প্লাটফোর্ম থাকা আসলেই প্রয়োজন। যে শিশু পর্ণোগ্রাফি তৈরি করে সে এই নেটওর্য়াক বন্ধ করলে আরেকভাবে তার কাজ করবে। আর তাছাড়া চিরকালই সাইবার সন্ত্রাসীরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে একধাপ এগিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি Internet Protocol ^ 6 বের হলেও সারফেস ওয়েবে এখনো পড়ে আছে সেই মান্ধতার আমলের Internet Protocol ^ 4 এ। অথচ আন্ডারগ্রাউন্ডের মোটামুটি সব সাইটই IP^6 ব্যবহার করছে।

যেহেতু ইন্টারনেটেরও মানুষের বাকি সব সৃষ্টির মত খারাপদিক আছে তাই এটার সাথেই মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। আর অবশ্যই বলব যে জীবনে একবার হলেও ডার্ক ওয়েবে ঘুরে আসুন, তা না হলে বরফখন্ডে আশ্রিত শীলের মত মহাসাগরের স্বাদ মিস করবেন।

তবে হ্যা, বেশী দূর যাবেন না। মনে রাখবনে, সরকারের অঢেল টাকা আছে, তাই তারা চাইলেই ডার্ক ওয়েবের মেধাবী হাজারো হ্যাকারকে ভাড়া করতে পারবে আপনারমত লোকদের ডার্ক ওয়েবে চোখে চোখে রাখতে।