ইলখানী চিত্রকলা কি?

ইলখানী চিত্রকলা

মুসলিম চিত্রকলার ইতিহাসে ইলখানী চিত্রকলার বিশেষ অবদান রয়েছে। ১২৫৮ সালে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসের পর সেখানে ইলখানী বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে মুসলিম চিত্রকলায় মেসোপটেমীয় চিত্ররীতির অবসান ঘটে। খ্রিষ্টান বাইজান্টাইন প্রভাবেব স্থানে সর্বপ্রথম চীনা প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

ইলখানী চিত্রকলার পরিচয়

ইলখানী সুলতান গাজান খানের রাজত্বকালে রাজধানী তাব্রিজ এর উপকণ্ঠে একটি চিত্রকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার মন্ত্রী রশীদ উদ্দিনের পৃষ্ঠপোষকতায় এর উৎকর্ষ সাধিত হয়। ইলখানী চিত্রকলা একাডেমিতে অন্যান্য চিত্রকরদের সাথে আগত চীনা চিত্রশিল্পীগণ তাব্রিজে বসে নিজস্ব চীনা রীতি নীতি ও উপাদানের মাধ্যমে চিত্র অঙ্কন করেন। ফলে মুসলিম চিত্রকলায় চীনা প্রভাব ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করে। এভাবে চীনা প্রভাবে ও ইলখানী শাসকদের পৃ্ষ্ঠপোষকতায় তাদের সাম্রাজ্যে যে চিত্রশিল্প গড়ে ওঠে তাই ইলখানী চিত্রকলা নামে খ্যাতি অর্জন করে।

ইলখানী চিত্রকলার পাণ্ডুলিপিসমূহ

ইলখানী চিত্রকলার চিত্রিত বিশেষ বিশেষ পাণ্ডুলিপিসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. মানাফী আল হাইওয়ান

ইলখানী চিত্রকলার অন্যতম প্রধান চিত্রিত পাণ্ডুলিপি মানাফী আল হাইওয়ান। ইহা মুসলিম চিত্রকলায় মেসোপটেমীয় রীতির স্থলে চীনা প্রভাবেব সূচনা করে।

২. আসার আল বাকীয়া

আল বেরুনীর আসার আল বাকীয়া ইলখানী চিত্রপিঠের একটি অন্যতম পাণ্ডুলিপি। এ পাণ্ডুলিপিতে অঙ্কিত প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীতে চীনা প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

৩. জামীআত-তাওয়ারিখ

রশিদ উদ্দিনের এ পাণ্ডুলিপিটি ১৩০৭ সালে চিত্রায়িত এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত। ১৩১৪ সালে চিত্রিত চিত্রসমূহ রয়াল এশিয়াচিক সোসাইটির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত।

৪. ডিমট শাহনামা

তাব্রিজে চিত্রিত ৫৮টি মিনিয়েচার বিশিষ্ট এ পাণ্ডুলিপিটি ১৩২০-৩৫ সালের দিকে চিত্রায়িত হয়। এ পাণ্ডুলিপিটি বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন যাদুঘর, গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন সংগ্রাহকদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও ইহা পূর্ববর্তী সংগ্রাহক ডিমটের নামানুসারে ডিমট শাহনামা নামে সুপ্রতিষ্ঠিত।

৫. কালিলা ও দিমনা

ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রক্ষিত কালিলা ওয়া দিমনার চিত্রিত পাণ্ডুলিপিতে ইলখানী চিত্রশিল্পের বিশেষ অবদান রয়েছে। কালিলা ওয়া দিমনায় চীনা প্রভাব উল্লেখের দাবি রাখে।

চীনা শিল্পনীতি ও প্রভাবের উপর ভিত্তি করেই ইলখানী চিত্রকলা, মুসলিম চিত্রশিল্পের ইতিহাসে নবদিগন্তের উন্মেষ ঘটিয়েছে।