কাশ্মীর সমস্যা বহুদিনের একটি অমীমাংসিত সমস্যা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তেকে এ সমস্যার উদ্বব ঘটে এবং অদ্যাবধি তার মীমাংসা হয়নি। বহুবার কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধঃ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই মূলত ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা।
১. ১৯৬৫ সালের কাশ্মীর যুদ্ধের কারণঃ ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে সর্বপ্রথম ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ১৯৬৫ সালে পুনরায় ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কের পুনরায় অবনতি ঘটে। দেশ বিভাগের সময় থেকে উদ্ভুত এ সমস্যা। সমাধানের জন্য জাতিসংঘ গণভোটের মাধ্যমে তা সমাধানের পক্ষে রায় দেয়। পাকিস্তান গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি সমর্থন করে। কিন্তু ভারত নানাভাবে এ প্রস্থাব অগ্রাহ্য করে এবং কাশ্মীরিদের সমর্থনের মুজাহিদ বাহিনী বা অনুপ্রবেশকারী পাটায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে বড় রকম এর যুদ্ধ বাধে।

২. ১৯৬৫ সালের কাশ্মীর যুদ্ধের ঘটনাঃ ১৯৬৫ সালের ৬ সেপেটম্বর পাকিস্তানের মুজাহিদ বাহিনী প্রেরনের প্রতিবাদে ভারত এক বিরাট ট্যাংক বহর নিয়ে পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে লাহোর অভিমুখে অগ্রসর হয়। এ যুদ্ধে বাঙ্গালি সৈন্যদের কৃতিত্বে লাহোর রক্ষা পায়। যুদ্ধে বাঙ্গালি সৈন্যরা শৌর্য-বীর্যের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। সতের দিনব্যাপী এ যুদ্ধ চলে। অবশেষে জাতিসংঘের নির্দেশে যুদ্ধের আপাতত অবসান ঘটে। উভয় দেশের মধ্যে তাসখন্দ চুক্তি সম্পাদিত হয়।

৩. ১৯৬৫ সালের কাশ্মীর যুদ্ধের ফলাফলঃ যুদ্ধকালে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে সমর্থন করে। কিন্তু এ যুদ্ধ পাকিস্তানের দু অঞ্চলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বভাবতই সেখানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই পশ্চিম পাকিস্তানিরা শান্তি চুক্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হয় ভিন্নরূপ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতিরক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা না হওয়ায় এখানে প্রতিমুহূর্তে নিরাপত্তার অভাব অনুভূত হয়। সেজন্য এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ শান্তি চুক্তিকে অভিনন্দন জানায়। তাছাড়া যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং খাদ্যসংকট দেখা দেয়। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ওও পুনর্গঠন বাবদ ট্যাক্সের মোটা অঙ্ক র্পর্ব পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপানো হয়। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ধ্বংস করারও হীন চক্রান্ত শুরু হয়। বাংলার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এর তীব্র জানায় এবং শেক মুজিব শেষ পর্যন্ত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা ছিল আমাদের মুক্তির সনদ।
পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৫ সালের কাশ্মীর যুদ্ধ এবং তাসখন্দ চুক্তি কাশ্মীর সমস্যার কোন সমাধান কিংবা যুদ্ধ বন্ধের কোন স্থায়ী ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে এ যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। সেই সাথে পশ্চিমাদের শোষণ-নির্যাতনও বড় হয়ে ধরা দেয়।