১৯০৬ সালের মুসলিম লীগ গঠন সম্পর্কে কি জান?

মুসলিম লীগ

ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৬ সালের নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের প্রতি উদারনীতি এবং মুসলিমদের প্রতি বৈরীনীতি অনুসরণ করে। ফলে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, চাকরি-বাকরি, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

এছাড়া বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম সমাজ অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে, মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ন্যায্য অংশ অর্জন করতে পারবে। এ প্রেক্ষিতে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের এক অধিবেশন বসে। সম্মেলন শেষে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ১৯০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটঃ

১৮৮৫ সালে ভারতীয় কংগ্রেসের জন্ম হলেও এটি ভারতীয় মুসলমানদেরকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করতে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। কেননা মুসলমানদের স্বার্থ ও দাবি-দাওয়া ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কর্মসূচিতে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় নি। যে কারণে ১৯০৬ সালে মুসলিম নেতা মহামান্য আগা খানের নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সিমলায় ভারতের গভর্নর জেনারেলের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করেন।

গভর্নর জেনারেল মুসলিম নেতৃবৃন্দের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস প্রদান করেন। এতে উৎসাহিত হয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠে। এই উদ্দেশ্যে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং একটি সুষ্ঠু সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়। এ সম্মেলন শেষে নবাব ভিকারুল মুলকের সভাপতিত্বে একটি রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই সভায় ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ মুসলমানদের জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

ভারতীয় মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল মুসলিম লীগ। ব্রিটিশ ক্ষমতার অবসানে মুসলিম লীগের অবদান ছিল অপরিসীম। কারণ এ সংগঠন ভারতীয় মুসলমানদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এক কাতারে নিয়ে আসে। কংগ্রেসের বিপরীতে মুসলমানদের জন্য এ ধরনের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *