হাত্তি হুমায়ুন কি?

হাত্তি হুমায়ুন

অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তথা তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে তানজিমাত বা সংস্কার যুগ এক অনন্য অধ্যায়। অটোমান সুলতান আব্দুল মজিদের শাসনকাল (১৮৩৯-১৮৬১) তানজিমাত বা সংস্কার যুগ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। সুলতান আব্দুল মজিদ সংস্কারের উদ্দেশ্যে ‘হাত্তি হুমায়ুন’ নামে সংস্কার কর্মসূচি জারি করেন।

হাত্তি হুমায়ুন

সুলতান আব্দুল মজিদের সংস্কার যুগে হাত্তি হুমায়ুন একটি অন্যতম সংস্কার। ১৮৪২ সালে স্যার স্ট্রেটফোর্ড ক্যানিং কনস্টান্টিনোপলে ইংল্যান্ডের দূত নিযুক্ত হয়ে আসেন। খ্রিস্টানদেরকে সর্ববিষয়ে তুর্কিদের সমপর্যায়ে উন্নীত করাই ছিল তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।

তার প্ররোচনায় পড়ে সুলতান আব্দুল মজিদ ১৮৪৪ সালে রেজা পাশাকে পদচ্যুত করে পুনরায় রশীদ পাশাকে উজিরে আজম নিযুক্ত করেন। ইতিপূর্বে ইসলামত্যাগীর একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। ক্যানিং এর চাপে সুলতান এ চিরাচরিত নিয়ম বাতিল করে দেন। ১৮৫৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সুলতান একটি শাহী ফরমান জারি করেন, যা তুরস্কের ইতিহাসে হাত্তি হুমায়ুন নামে পরিচিত। এতে খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে সৈন্য সংগ্রহের, তাদের স্বায়ত্তশাসনমূলক সভা আহবানের, সর্ব জাতি-ধর্মের লোককে রাজকর্মে নিয়োগের, অমুসলিম সাধকদের বিবিধ প্রাপ্য রদ করে তাদেরকে নির্দিষ্ট বেতন দানের, বাদী-বিবাদী বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলে মিশ্র আদালত গঠনের, অমুসলিমদের উপর জিজিয়া রদের, মুসলিম আদালতে খ্রিস্টানদের সাক্ষ্য গ্রহণের এবং বাণিজ্য ও ফৌজদারি আইন সংশোধনের নির্দেশ ছিল। তবে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী ছিল বলে নতুন এ আইন কারো মনঃপূত হয় নি।

সুলতান আব্দুল মজিদের শাসনকাল ছিল মূলত সংস্কারের যুগ। ‘হাত্তি হুমায়ুন’ তার সংস্কার কার্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তার এ সংস্কারমূলক কৃতকর্মের জন্য তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।