
স্যাটেলাইট কী?
একটা জিনিস রকেট দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে পাঠিয়ে দিলাম, কেন সেটা ছিটকে পড়ছে না বাইরে? বা, আবার পড়ে যাচ্ছে না পৃথিবীতে? এখানেই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য। যে কোনো বস্তুই অন্য বস্তুকে নিজের দিকে টানে, যাকে আমরা মহাকর্ষ বলি। আর, সেই বস্তুগুলার একটা যদি পৃথিবী হয়, তখন পৃথিবী যেই বলে অন্য বস্তুটাকে টানে, তাকে বলে অভিকর্ষ (অর্থাৎ, অভিকর্ষ মহাকর্ষের একটি বিশেষ নাম, যেখানে পৃথিবী অন্তর্ভুক্ত)। এই মহাকর্ষ বলের কারণেই আমরা এবং সৌরজগতের অন্যরা সূর্যের চারিদিকে ঘুরছি অবিরাম। তো, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে কোনো স্থানে (কক্ষপথে) পৃথিবীর এই আকর্ষণবল এবং পাঠানো বস্তুর গতি, এই দুটোর ভারসাম্য খুঁজে বের করে যদি সেই গতিতে কোন কিছুকে সেখানে পাঠানো হয়, তখন সেটা সেখানে পৃথিবীর আকর্ষণে আটকে গিয়ে ঘুরতে থাকবে পৃথিবীকে ঘিরে। যেহেতু বায়ু বা অন্য কোনো কিছুর বাধা নেই সেখানে, তাই সেই গতিতেই সেটা চলতে থাকে, চলতেই থাকে (নিউটনের গতির প্রথম সূত্র)।

বুঝলাম যে, তারা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সেখানে তো হাজার হাজার এরকম স্যাটেলাইট ঘুরছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হচ্ছে না কেন? সংঘর্ষ হচ্ছে না কারণ তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথে এবং ভিন্ন ভিন্ন গতিতে প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীকে। এরপরও যে সংঘর্ষ হয় না, তা না। এইতো ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতেই দুইটা কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট এর মধ্যে সংঘর্ষ হলো যারা একটি ছিল আমেরিকার, আরেকটি রাশিয়ার। তবে এটিই এখন পর্যন্ত এই ধরনের একমাত্র ঘটনা।
ব্ল্যাক হোল রহস্য! আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন
স্যাটেলাইট কত প্রকার ও কি কি?

মূলত স্যাটেলাইট তিন(০৩) প্রকার,
ক। লো-আর্থ অরবিট (LE0-Low Earth Orbit)
খ। মিডিয়াম আর্থ অরবিট (ME0- Medium Earth Orbit)
গ। জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GE0-Geostationary Earth Orbit)

লো-আর্থ অরবিট (LEO-Low Earth Orbit)
লো-আর্থ অরবিট এর কৃত্তিম উপগ্রহ পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ১৬০-২,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। যে স্যাটেলাইটগুলাতে দ্বারা পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা হয় সাধারণত সেই কৃত্তিম উপগ্রহগুলাকেই এই কক্ষপথে রাখা হয় । যেহেতু এই স্যাটেলাইটগুলাতে পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে তাই এই কৃত্তিম উপগ্রহগুলাতে দ্বারা প্রায় নিখুঁত ভাবে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা যায় । এই কক্ষপথেই আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশনের অবস্থান।
মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO- Medium Earth Orbit)
মিডিয়াম আর্থ অরবিটের কৃত্তিম উপগ্রহ পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ২০,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই কক্ষপথের কৃত্তিম উপগ্রহগুলাতে পাঠাতে অনেক শক্তির দরকার পরে । মিডিয়াম আর্থ অরবিটের কৃত্তিম উপগ্রহগুলোর গতিবেগ খুবই মন্থর হয়ে থাকে। মোট ১২টি মিডিয়াম আর্থ অরবিটের কৃত্তিম উপগ্রহদিয়ে পুর পৃথিবীতে সংযোগ করা যায়, এর সংখ্যা জিওস্টেশনারি আর্থ এর থেকে বেশি কিন্তু লো-আর্থ এর তুলনায় বেশ কম হয় । এই কক্ষপথে সাধারণত জিপিএস কৃত্তিম উপগ্রহগুলাতে থাকে।
জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GEO-Geostationary Earth Orbit)
জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের কৃত্তিম উপগ্রহ পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ৩৬,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই স্যাটেলাইটের ক্ষমতা অনেক বেশি হয় । টিভি এবং রেডিও ট্রান্সমিশনে এর কাজে জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট। ব্যাবহার করা হয়। সাধারণত অ্যান্টেনার একটা নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এই কক্ষপথে ।
কাজের উপরে ভিত্তি করে কৃত্তিম উপগ্রহ এর প্রকারভেদঃ
কমিউনিকেশন কৃত্তিম উপগ্রহ (Communication Orbit):
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে তথ্যের আদান প্রদান করার জন্য এই কৃত্তিম উপগ্রহ ব্যাবহার করা হয়। কমুনিকেশন এই সিস্টেমকে স্পেস কমিউনিকেশনও বলা হয়ে থাকে। এর মাঝে ব্রডকাস্টিং কৃত্তিম উপগ্রহ অন্তর্ভূক্ত। পাওয়ার সাপ্লাই, ট্রান্সমিটার বা প্রেরক যন্ত্র, রিসিভার বা গ্রাহক যন্ত্র এবং অ্যান্টেনা নিয়ে এই কৃত্তিম উপগ্রহ গঠিত।
কমুনিকেশন কৃত্তিম উপগ্রহ সিস্টেমে আর্থ স্টেশনের ট্রান্সমিটার হতে মডুলেটেড সিগন্যাল বা মাইক্রোওয়েভ স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। তারপরে কৃত্তিম উপগ্রহ ঐ মডুলেটেড সিগন্যালকে বিবর্ধিত করে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠায় । এই ভাবে সিগন্যাল গ্রহন এবং সেটা বর্ধিত করে আবার গ্রাহক স্টেশনে পাঠাবার মাধ্যমেকমুনিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ওয়েদার স্যাটেলাইট (Weather Orbit):
ওয়েদার কৃত্তিম উপগ্রহের দ্বারা পৃথিবীর আবহাওয়া সংক্রান্ত ফটো ধারন করা হয়ে থাকে। কিছু ওয়েদার কৃত্তিম উপগ্রহ হলাে GE0s , coSM0s এবং TIR0s । আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের সকল কাজ ওয়েদার। কৃত্তিম উপগ্রহের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে ।
ন্যাভিগেশন কৃত্তিম উপগ্রহ (Navigation Orbit):
এই কৃত্তিম উপগ্রহ মূলত পথ নির্দেশনা করার কাজে ব্যাবহার করা হয় যেমন, সমুদ্রগামী জাহাজ ডিটেক্ট এবং বিমান ইত্যাদি এর পথ নির্দেশনা দিতে ন্যাভিগেশন কৃত্তিম উপগ্রহ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। GPSNAVSTAR এমনই একটি স্যাটেলাইট । আবার জিপিএস এমন একটিকৃত্তিম উপগ্রহ নেভিগেশন মাধ্যম, এখানে সময়ে এবং যেকোন আবহাওয়াতেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে যেকোনাে তথ্য এবং পৃথিবীর যে কোন অবস্থানের ছবি পাঠানাে যায় । ২৪টা কৃত্তিম উপগ্রহ দ্বারা এই সিস্টেম তৈরি করা হয়।
প্রোগ্রাড কৃত্তিম উপগ্রহ (Prograde Orbit):
প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে কম হয়ে থাকে। সাধারনত পৃথিবীর ঘূর্ণন যে দিকে হয় প্রোগ্রাড কৃত্তিম উপগ্রহও ঐ একই দিকে ঘােরে ।
রেট্রোগ্রাড কৃত্তিম উপগ্রহ (Retrograde Orbit):
রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট প্রোগ্রাড কৃত্তিম উপগ্রহের ঠিক উল্টো কাজ করে। এই অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে বেশি হয়ে থাকে। আবার এই কৃত্তিম উপগ্রহ পৃথিবী যে দিকে ঘোরে তার বিপরীত দিকে ঘোরে ।
হম্যান কৃত্তিম উপগ্রহ (Hohmann Transfer Orbit):
এই কৃত্তিম উপগ্রহ জিওস্টেশনারীকৃত্তিম উপগ্রহের সাহায্যে ব্যাবহার করা হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে এর অরবিটে সিগন্যাল প্রেরণ করার কাজে। এই কৃত্তিম উপগ্রহগুলো সাধারনত উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।
পোলার কৃত্তিম উপগ্রহ (Polar Orbit):
এই স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন একদম এক সমকোন হয়ে থাকে। এটি NPOESS স্যাটেলাইট সমূহ প্রত্যেকবার ঘূর্ণনের সময় দক্ষিন মেরু এবং উত্তর মেরু এই দুই মেরুর উপড়ে দিয়েই চলে ।
সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট (Sun Synchronous Orbits- Satellite ):
এটির নাম সূর্যের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট । এই স্যাটেলাইটগুলাতে এমন ভাবে পৃথিবীর সাথে ঘােরে যাতে সবসময় সূর্যের আলোতে এর উপরে পড়ে। তাই বলা চলে এগুলাতে কখনই অন্ধকারে থাকে না। CRYoSAT-2 একটি সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট ।