সুপারনোভা কি পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর?

download 1

অতিপ্রাচীন কাল থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সুপারনোভার সাথে পরিচিত। হাজার বছর আগের প্রযুক্তি বর্তমান কালের মত ছিল না। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা কেবলমাত্র খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করতেন। কিন্তু অনুসন্ধানী মানুষের কাছে ঠিকই ধরা পরেছে সুপারনোভা বা অতি-নবতারা। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সুপারনোভা অনুসন্ধানের জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টেলিস্কোপ এবং চার্জ কাপল্‌ড ডিভাইস তথা CCD ব্যাবহার শুরু করে।

সৌখিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এগুলো খুব জনপ্রিয়। পাশাপাশি পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য। সর্বপ্রথম সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে। এক চীনা জ্যোতির্বিদগণ দেখলেন ট্যুরাস নক্ষত্রপুঞ্জের একটি তারায় হঠাৎ করে যেন আগুন ধরে গেল। এর নাম রাখা হয়েছে এসএন-১৮৫ । এটি পর্যবেক্ষণকৃত সর্বপ্রাচীন সুপারনোভাও বটে। SN-১০০৬ সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সুপারনোভা হিসেবে পরিচিত। চীনা এবং ইসলামী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সুপারনোভার বিশদ বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাও প্রায় হাজার বছর আগে। আমাদের ছায়াপথে সংঘটিত সর্বশেষ সুপারনোভা দুটি ছিল SN- ১৫৭২এবং SN-১৬০৪। এই সুপারনোভা দুটি খালি চোখে দেখা গিয়েছিল। জোহানেস কেপলার ১৭ অক্টোবর ১৬০৪ সালে SN-১৬০৪ নামের একটি সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। এটা ছিল একটি প্রজন্মে দৃশ্যমান দ্বিতীয় সুপারনোভা।

images 60

সুপারনোভা পৃথিবীর জন্য কতটা ক্ষতিকর?

যদি কোন সুপারনোভা পৃথিবীর খুবই কাছাকাছি কোথাও বিস্ফোরিত হয় তবে পৃথিবীর প্রানীজগতের উপর খুবই বাজে প্রভাব পড়বে। ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করবে কি পরিমাণ শক্তি সুপারনোভা বিকিরণ করল। প্রায় ৩০০০ আলোকবর্ষের ভেতরের সুপারনোভা যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিস্ফোরণে যে গামা রে বিকিরিত হবে তা বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করবে যার ফলে নাইট্রোজেন নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত হবে। ওজোন স্তর সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে, যার ফলে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি মাটিতে সরাসরি পড়বে।

অরডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান মহাবিলুপ্তি সুপারনোভা বিস্ফোরণের কারণে হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এই মহাবিলুপ্তির ঘটনায় ঐ সময়ের প্রায় ৬০% প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে ভূতপূর্ব সুপারনোভা বিস্ফোরণের শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। আয়রন-৬০ আইসোটোপ জমা হবার খবর পাওয়া যায় প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে। ২০০৯ সালে এন্টার্কটিকার বরফে নাইট্রেট আয়নের বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়। এর কারন হিসেবে ধরা হয় ১০০৬ ও ১০৫৪ সালে ঘটা দুটি সুপারনোভা।

ঐ সুপারনোভা থেকে আসা গামা রে’র কারণে হয়ত বায়ুমন্ডলের নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল যা নাইট্রেট আয়ন হিসেবে বরফে আটকে ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের এ ধরণের নক্ষত্র হল আইকে পেগাসী সিস্টেম, যা পৃথিবী থেকে মাত্র প্রায় ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে টাইপ টু সুপারনোভা বিস্ফোরণ যদি পৃথিবীর ২৬ আলোকবর্ষের মাঝে হয়, তবে ওজোন স্তরের অর্ধেকটা নিঃশেষ হয়ে যাবে। টাইপ টু স্পারনোভা বিস্ফোরণ হয় সূর্য থেকে কমপক্ষে আট গুণ ভারী নক্ষত্র থেকে। কিন্তু এই ধরণের সুপারনোভা হবার মত প্রার্থী নক্ষত্র পৃথিবীর ৫০০ আলোকবর্ষের মাঝে কোনটি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *