সফটওয়্যার পাইরেসি কি? সফটওয়্যার পাইরেসির প্রতিরোধ।

সফটওয়্যার পাইরেসি কি? সফটওয়্যার পাইরেসির প্রতিরোধ।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উন্নয়নকৃত বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ব্যতীত নকল করাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বা সফটওয়্যার কপি করা বলা হয়। মানুষের সকল সৃজনশীল কাজই মস্তিষ্কজাত। কখন এটি বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, কখন এটি ধারণা হিসেবে থাকে। কখন এটি সূত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। সফটওয়্যার এমনি একটি মেধাস্বত্ব। আর কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এ সফটওয়্যারের মেধাস্বত্ব রক্ষার জন্য প্রণীত আইনকেই সফটওয়্যার কপিরাইট আইন বলে অভিহিত করা হয়। সারা বিশ্বে মেধাস্বত্ব আইন রয়েছে। সভ্য মানুষ মেধার মূল্যকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী এ আইনকে সম্মান করা হয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশ জেনেভা কনভেনশন নামক চুক্তিতে সই করে মেধাস্বতের মর্যাদা দেবার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করেছে। আমাদের দেশও তাই করেছে।

সফটওয়্যার পাইরেসি কি – (What Is Software Piracy)

আসলে, যেসব সফটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার বা নির্মাতা রয়েছে, তারা আইনতভাবে তাদের প্রোডাক্ট বা সফটওয়্যার তৈরী করে থাকে এবং সেগুলো বাজারে সরবরাহ (supply) করে থাকে। এইবার ব্যাপার হল, যখন কোনো আইনতভাবে তৈরী সফটওয়্যারের লাইসেন্স চুক্তিতে বলা অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো অসৎ উপায়ে যদি সেই সফ্টওয়্যারের অবৈধ অনুলিপি, ইনস্টলেশন, ব্যবহার, বিতরণ বা বিক্রয় করা হয়, তখনই সেই বেআইনি উপায়গুলো সফটওয়্যার পাইরেসি বলে বিবেচিত হয়। 

সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ইনস্টল করা প্রায় ৩৭% সফ্টওয়্যার হল বেআইনি বা লাইসেন্সবিহীন সফ্টওয়্যার। এই পাইরেসি বা বেআইনি ব্যবহারের ফলে সফটওয়্যার শিল্প ও কোম্পনিগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চলেছে। এই সফ্টওয়্যার পাইরেসি সাধারণত শেষ ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি ডিলারদের দ্বারাও পরিচালিত হয়। আর, এই পাইরেসির জন্য কোনো দক্ষ হ্যাকার বা কোডারের প্রয়োজন পড়ে না।

কোনো ব্যক্তি যদি সফটওয়্যার আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকেন, তবে তিনি অনেক সময়ই সাধারণ ভাবে কম্পিউটার ব্যবহারের সময়, নিজের অজান্তেই একজন সফটওয়্যার পাইরেট বা সফটওয়্যার জালিয়াতে পরিণত হয়ে যেতে পারেন। তাই, এইরকম ক্ষতিকারক, বেআইনি অপরাধ থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করতে এইসব পাইরেসিগুলোর সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিতভাবে জানা উচিত।

সফটওয়্যার পাইরেসির সংজ্ঞা – (Definition of software piracy)

সফ্টওয়্যার পাইরেসি হল আইনত সুরক্ষিত সফটওয়্যার গুলোকে বেআইনিভাবে চুরি করা।  এই চুরির মধ্যে পড়ে সফ্টওয়্যারের কপি বা অনুলিপি তৈরী করা, বিতরণ করা, পরিবর্তন করা কিংবা অসৎ উপায়ে বিক্রি করা।  এই সফটওয়্যার গুলোকে সুরক্ষিত করতে নানা ধরণের কপিরাইট আইন তৈরী করা হয়েছে, যাতে সফ্টওয়্যার ডেভেলপার বা নির্মাণকারীরা (প্রোগ্রামার, রাইটার, গ্রাফিক ডিসাইনার প্রমুখ) তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য, সম্মান এবং পারিশ্রমিক পান।

আর, যখন এই সফটওয়্যার পাইরেসি করা হয়, তখনই এই কপিরাইট অধিকারীদের অর্থাৎ নির্মাণকারীদের তাদের যথাযথ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। পাইরেটেড সফ্টওয়্যার বিক্রি করে পাইরেট বা অপরাধীরা অনায়াসেই প্রচুর সুবিধা লাভ করে থাকে অথচ যারা প্রচুর টাকা ও পরিশ্রম ব্যয় করে সফটওয়্যারটি তৈরী করেন তাদের তো বটেই বরং সমস্ত সফ্টওয়্যার শিল্পের ব্যবসাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

আর, জাল সফটওয়্যার গুলো পাইরেটেড সফটওয়্যার বলে পরিচিত।

pharming hero 1

সফটওয়্যার পাইরেসির ধরণ-ধারণ:

পাইরেসি বিভিন্ন উপায়ে করা হয়ে থাকে।  যেমন – হার্ড-ডিস্ক লোডিং, কাউন্টারফেইটিং, সফটলিফটিং, সফ্টওয়্যার ভাড়া দেওয়া এবং বুলেটিন বোর্ড পাইরেসি ও ইত্যাদি। প্রকৃত লাইসেন্সধারী সফ্টওয়্যার গুলো ব্যবহারকারী বা গ্রাহকদের জন্য অনেকগুলো মূল্যবান সুবিধা প্রদান করে,যেমন- আপগ্রেড করার অপসন, উন্নতমানের কোয়ালিটি এবং রিলায়েবিলিটি নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া ও ইত্যাদি। 

এমনকি, কোনো কোম্পানি যদি পাইরেটেড সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে, তবে তাদের বিশাল আর্থিক ও আইনত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া, পাইরেটেড সফ্টওয়্যার ব্যবহার করলে উপরে উল্লেখিত কোনো সুবিধাই তারা গ্রাহকদের প্রদান করতে পারেনা। এবং দেখা গেছে যে অনেক পাইরেটেড সফটওয়্যার গুলো ফ্রীতে বিতরণ করে সেগুলোর মাধ্যমে ভাইরাস, অ্যাডওয়্যার ইত্যাদি ছড়ানো হয়।

সফটওয়্যার পাইরেসির প্রকার

মূলত, পাঁচটি প্রধান ধরনের সফটওয়্যার পাইরেসি দেখা যায়। এই ধরনের পাইরেটিং কৌশল গুলো ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে, কি করে একজন মানুষের ইচ্ছাকৃত অপরাধের সাথে অন্যরা তাদের অজান্তে সেই ব্যক্তির সংঘটিত অপরাধের শিকার হয়।

১. সফটলিফটিং:

যখন কেউ একটি মাত্র সফটওয়্যারের সংস্করণ ক্রয় করেন এবং সেটি একাধিক কম্পিউটারে ডাউনলোড করেন, তখন এই ধরণের পাইরেসিকে সফটলিফটিং বলে চিহ্নিত করা হয়।  তবে, সফ্টওয়্যার লাইসেন্সে বলা হয় যে, সফটওয়্যারের একটিমাত্র সংস্করণ শুধুমাত্র একবারই ডাউনলোড করা উচিত। এই ধরণের সফটলিফটিং অপরাধ গুলো প্রায়শই স্কুল বা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে করা হয়ে থাকে। এই ধরণের সফটলিফটিং অপরাধ গুলো প্রায়শই স্কুল বা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে করা হয়ে থাকে। 

২. ক্লায়েন্ট সার্ভারের অতিরিক্ত ব্যবহার:

ক্লায়েন্ট-সার্ভার ব্যবস্থার অত্যধিক ব্যবহারও হল একধরণের প্রাইভেসি। যখন একটি নেটওয়ার্কে অনেক মানুষ একই সময়ে প্রোগ্রামের একটি প্রধান অনুলিপি ব্যবহার করে, তখনই এই ধরণের পাইরেসি ঘটতে পারে। মূলত, যখন ব্যবসাগুলো একটা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের অধীনে থাকে এবং সমস্ত কর্মীদের ব্যবহারের জন্য একই সফ্টওয়্যার বারবার বিভিন্ন কম্পিউটারে ডাউনলোড করে, তখনই সেটা সফটওয়্যারের বেআইনি ব্যবহার হিসেবে মনে করা হয়। (অবশ্যই যদি লাইসেন্স আপনাকে এই সফটওয়্যারটি একাধিকবার ব্যবহার করার অধিকার না দেয় তো।)

৩. হার্ড ডিস্ক লোডিং:

হার্ড ডিস্ক লোডিং হল এক ধরনের বাণিজ্যিক সফ্টওয়্যার পাইরেসি। এতে কেউ সফ্টওয়্যারটির একটি আইনি সংস্করণ কিনে নেন আর তারপর কম্পিউটার হার্ড ডিস্কে যতবার ইচ্ছে পুনরুৎপাদন বা জেনারেট করেন, কপি করেন বা ইনস্টল করেন কিংবা তারপর সেই সফটওয়্যারের বেআইনি সংস্করণগুলো বিক্রি করেন। তখনই তা হয়ে যায় হার্ড ডিস্ক লোডিং পাইরেসি। এই ঘটনা প্রায়ই PC রিসেলিং করার দোকানে ঘটে এবং অসেচতন ক্রেতারা বেশিরভাগই অবৈধভাবে নিজেদের অজান্তে সেইসব পাইরেটেড সফ্টওয়্যার কিনে থাকেন।

৪. জালিয়াতি বা কাউন্টারফেইটিং:

যখন সফ্টওয়্যার প্রোগ্রামগুলো অবৈধভাবে নকল করা হয় এবং অথেন্টিসিটির নাম করে নকল সংস্করণ বিক্রি হয়, তখন তাকে সফটওয়্যার কাউন্টারফেইটিং বা জালিয়াতি বলে। জাল সফ্টওয়্যারগুলো অনেক সময়ই বৈধ সফ্টওয়্যারের তুলনায় অনেকটা কম মূল্যে মার্কেটে বিক্রি করা হয়।

৫. ইন্টারনেট পাইরেসি:

ইন্টারনেট পাইরেসি বা অনলাইন পাইরেসি হল যখন বেআইনি, লাইসেন্সবিহীন সফ্টওয়্যার ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি বা কেনা হয়। এই পাইরেসি সাধারণত একটা পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) ফাইল-শেয়ারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়, যা বিভিন্ন অনলাইন নিলাম সাইট এবং ব্লগের আকারে দেওয়া থাকে।

সফটওয়্যার পাইরেসির বিপদ সমূহ:

সফ্টওয়্যার পাইরেসি অনেক অসৎ উপায়ে রোজগারের পথ করে দিলেও, আসলেই এটি অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আর এর ফলে দেখা দিতে পারে সমূহ বিপদ, সেগুলো হল –

১. সফ্টওয়্যারটির ত্রুটির পরিমাণ বেড়ে যায় কিংবা অনেক সময়ই তা কাজ করতে ব্যর্থ হয়।

২. নকল সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে প্রি-লোডেড ট্রেনিং, আপগ্রেডস, কাস্টমার সাপোর্ট এবং বাগ ফিক্সিং-এর মতো মূল্যবান ও সহায়তাকারী প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্সেস কেড়ে নেওয়া হয়। যা সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় একজন গ্রাহকের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৩. জাল সফটওয়্যারে কোনোরকম ওয়ারেন্টি থাকে না এবং কোনো ধরণের কোম্পানির দেওয়া সফ্টওয়্যার আপডেটও করা যায় না।

৪. অ্যাডওয়্যার, ম্যালওয়্যার, ভাইরাসের মতো ক্ষতিকারক প্রোগ্রামগুলো জাল সফটওয়্যারের সাথে চলে আসে। যা আপনার কম্পিউটারকে সংক্রামিত করে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৫. বেআইনি সফটওয়্যার আপনার কম্পিউটার সিস্টেমকে স্লো বা শ্লথ করে দিতে পারে।

৬. কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করে আপনি অজান্তেই কোনো আইনি জালে আবদ্ধ হয়ে যেতে পারেন।

তাই, নিজের কম্পিউটার সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকেই সফটওয়্যার কিনুন। যেকোনো সফ্টওয়্যারের শর্তাবলীর সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকুন। আর, সফটওয়্যার ইন্সটলেশনের সময় সমস্ত শর্তাবলী ভালো করে পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী অনুমতি প্রদান করুন। আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখতে অবশ্যই আসল অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন, যা আপনার ডিভাইসকে সফটওয়্যার পাইরেসি থেকে শুরু করে যেকোনো থ্রেট বা হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারবে।

img SoftwarePiracy1.1 175181258

সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষসমূহঃ


সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্রেতা, বিক্রেতা, প্রস্তুতকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাইরেসির ফলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘিত হয় বলে একদিকে যেমন প্রস্তুতকারীর আর্থিক ক্ষতি হয় অন্যদিকে ব্যবহারকারী বা ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সকলেই বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। যথা–
সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী (Software Owner)
সফটওয়্যার ব্যবহারকারী (Software Users)
রাষ্ট্র বা সরকার (Government)
বিশ্ব অর্থনীতি (The Global Economy)

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী (Software Owner): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যেমন, ২০০১ সালে সফটওয়্যার অ্যালায়েন্স (Business Software Alliance) নামক একটি প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে ১৩ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

সফটওয়্যার ব্যবহারকারী (Software Users): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যবহারকারী নানাবিধ সমস্যায় পড়তে পারে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পাইরেটেড সফটওয়্যারের জন্য কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। তাই আপডেট বা আপগ্রেড করার সুবিধা, নতুন অংশের সংযোজন প্রভৃতি করা যায় না। পাইরেটেড সফটওয়্যার ভাইরাস বহন করতে পারে অথবা একবারে কাজ নাও করতে পারে। লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারে যথাযথ ডকুমেন্টশন থাকে না। কোন প্রতিষ্ঠানে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ঐ প্রতিষ্ঠানের পণ্য দ্রব্যাদি কিংবা সেবার মান ব্যহত হয়। পাইরেটেড সফটওয়্যারে অনেক সময় ভার্ষন কন্ট্রোল করার ব্যবস্থা দেয়া থাকে না, যার ফলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয় এবং সফলতার হার কমে যায়। আবার আইনসঙ্গত (Legitimate) ব্যবহারকারীরাও পড়েন আর্থিক সমস্যায়। পাইরেসির ফলে রাষ্ট্র বা সরকার ট্যাক্স বা ভ্যাট আদায় থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশ্ব অর্থনীতি (The Global Economy): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কোন প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যার বাজারজাত করতে গেলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার যদি পাইরেটেড হতে থাকে তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পাইরেসির কারনে বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং সফটওয়্যার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে শত শত চাকুরির পদ বিলুপ্ত হয়। ফলে এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়ে। ‘পরিসংখ্যান মতে’, পাইরেসির হার বিশ্বব্যাপী ৩৬% হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সফটওয়্যার পাইরেসির প্রতিরোধ (Preventing Software Piracy)


সফটওয়্যার পাইরেসির কারণে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য সফটওয়্যার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রোগ্রামার ও ডেভেলপারকে যথেষ্ট পরিমাণ সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। সফটওয়্যার পাইরেসির জন্য প্রোগ্রামার বা ডেভেলপারের যে আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ার কারণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ফলে ভালমানের সফটওয়্যার তৈরি হয়না এবং ক্রেতা-বিক্রেতাসহ অন্যান্যরাও আইন বিরুদ্ধ কাজে নিযুক্ত হয়। এ কারণে সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধ করা প্রয়োজন। সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যথা–
সচেতনতা বৃদ্ধি (Awareness): পাইরেসি মানে অন্যের জিনিস চুরি করার সামিল। পাইরেসি সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই পাইরেসি কি এবং পাইরেসির ফলে কি কি কুফল হতে পারে সে সম্পর্কে সবাইকে বুঝানো যাতে তারা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।

কপি প্রটেক্টেড করা (Copy protection): সফটওয়্যার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত সফটওয়্যার যাতে কপি করতে না পারে সেজন্য প্রটেক্ট করে দিতে পারে। এন্টিপাইরেসি সফটওয়্যার ব্যবহার, রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি, হার্ডওয়্যার লক কী ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে পাইরেসি প্রতিরোধ করা যায়।

গোপনীয়তা (Privacy): সফটওয়্যার তৈরির সময় গোপনীয়তা অবলম্বন করা উচিত যাতে অন্য কেউ প্রোগ্রামের সম্পূর্ন কোড বা অংশবিশেষ কপি করতে না পারে।

সফটওয়্যার অথেনটিক্যাশন এবং এক্টিভেশন (Software authentication and activation): ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফটওয়্যার অথেনটিক্যাশন এবং এক্টিভেশন থাকলে ব্যবহারকারীর সফটওয়্যারটি অরজিনাল অর্থাৎ ক্রয় করা কিনা তা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

রিপাের্ট করা (Reporting): কেউ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে যথাশীঘ্র সম্ভব সরবরাহকারী বা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে জানান যে তার তৈরিকৃত সফটওয়্যার বিনা অনুমতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরােধের সর্বোত্তম উপায়।

আইনগত ব্যবস্থা (Legal action): অন্যান্য বিষয়ের মতাে মেধাস্বত্ত্ব অধিকার রক্ষার জন্য কপিরাইট বা আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রােপার্টি রাইট) বাস্তবায়ন করে সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরােধ করা সম্বব। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে সফটওয়্যার পাইরেসি শক্তভাবে প্রতিরােধ করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *