যে সব বরেণ্য দেশ নেতা তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ ও জাতিকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এদের মধ্যে অন্যতম এ. কে. ফজলুল হক। তিনি ফজলুল হক ছিলেন এ দেশের মানুষের অতি আপনজন। এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন শিক্ষার অগ্রদূত, গরিব কৃষকের বন্ধু।
জন্মস্থানঃ
পিরোজপুর জেলার [পূর্বের বরিশাল জেলার মহকুমা] চাখার গ্রামে ১৮৭৩ সালের ১৬ অক্টোবর আবুল কাশেম ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলবী মুহাম্মদ ওয়াজেদ আলী। তিনি ছিলেন বরিশালের প্রখ্যাত আইনজীবী।
শিক্ষাঃ
ফজলুল হক ছিলেন বিত্তবান পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। বাল্যকালে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুরন্ত স্বভাবের। তার দুরন্তপনা সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। বাল্যকালেই তার শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন খুব মেধাবী। ফজলুল হক শৈশবে বাড়িতে আরবি, ফারসি ও উর্দুভাষা শিক্ষালাভ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে তিনি প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। পরে কলকাতা থেকে এফ. এ. পাস করার পর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সসহ বি. এ. পড়েন। কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স পাস করার পর ১৮৯৭ সালে তিনি বি. এল পাস করেন।
কর্মজীবনঃ
ফজলুল হক ১৮৯৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। এর কয়েক বছর পর ১৯০৬ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা পুরুষ। ১৯১২ সালে তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে দেন। পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করেন। শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। ১৯১৩ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২০ সাল পযর্ন্ত তিনি এই আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন।
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবে ভারতীয় উপমহাদেশে পাকিস্তান সৃষ্টির পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
দেশসেবাঃ
আবুল কাশেম ফজলুল হক খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তার অকৃত্রিম দেশসেবার দ্বারা দেশবাসীর মন জয় করেন। তার সাহস ও বলিষ্ঠ চরিত্রের জন্য তিনি ‘শেরে বাংলা’ উপাধি লাভ করেন। শেরে বাংলার শব্দের অর্থ বাংলার বাঘ। আসলে তিনি ছিলেনও তাই। তার অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল বাঘের মতোই ছিল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের মুকুটহীন সম্রাট। শেরে বাংলা এদেশের গরিব কৃষকদের অসাধারণ উপকার সাধন করে গেছেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ছিলেন।
চরিত্রঃ
শেরে বাংলার চরিত্র ছিল শিশুর মতো সরল, সিংহের মতো বলিষ্ঠ ও দরিদ্রদের প্রতিভালবাসায় দুর্বল। তিনি ছিলেন খুব ভোজন বিলাসী।