লোকটাস ও রয়টার কনশেসন কি?

লোকটাস

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরানের সমৃদ্ধি নির্ভর করে তেল অনুসন্ধান, উত্তোলন ও রপ্তানির উপর। মোটকথা ইরানের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ হচ্ছে অফুরন্ত তেল সম্পদ। সম্প্রতি তেল সম্পদকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, কোন্দল, বিদ্বেষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ফলে শুরু হয় ব্যাপক অনুসন্ধান জরিপ ও উত্তোলনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার।

লোকটাস ও রয়টার কনশেসন

নাসিরুদ্দিন শাহের রাজত্বকালে ইরানের তেল সম্পদ সম্বদ্ধে সর্বপ্রথম অনুসন্ধান চালান একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৮৫৫ সালে যে বিশেষজ্ঞ এ দায়িত্ব পালন করেন, তার নাম লোকটাস। কিন্তু যে বিদেশিকে দীর্ঘকাল যাবৎ এ গুরুত্বপূর্ণ কনশেসন প্রদান করা হয় তিনি হচ্ছেন ইংরেজ ব্যারন জুরিয়াস ডি. রয়টার।

এভেরীর মতে, রয়টার কনশেসনই পারস্য সরকার কর্তৃক কোনো বিদেশিকে প্রদত্ত সর্ববৃহৎ কনশেসন এবং এর ব্যাপকতাও ছিল অত্যাধিক। ১৯৮২ সালে নাসিরুদ্দিন শাহের রাজত্বকালে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রী মির্জা হাসান খান সিপাহশালার বিদেশি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের পারস্যের সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহারে তা রপ্তানির কনশেসন প্রদানের পরিকল্পনা করেন। রুশ ঋণ পরিশোধের জন্য ব্রিটিশ নাগরিক রয়টারকে এ কনশেসন দেওয়া হয়। খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য রয়টারকে সাত বছরের জন্য সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধা লাভের ফলে রয়টার পারস্যে কয়লা, লোহা, তামা, ব্রোঞ্জ (সোনা, রুপা ছাড়া) প্রভৃতি খনিজ পদার্থ আহরণের ক্ষমতা পান।

এর বিনিময়ে পারস্য সরকার ১৫% রয়ালটি পায়। রুশ সরকার ব্রিটিশ কনশেসনে খুশি হতে পারে নি। এছাড়া ইরানি জনগণ পারস্যের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য বিদেশি ব্যবসায়ীকে কনশেসন প্রদান সুনজরে দেখে নি। ফলে ১৮৭৪ সালে রয়টার কনশেসন বাতিল ঘোষিত হয়।

ব্যারন রয়টারের কনশেসন বাতিল হলে ইরান সরকার ১৮৭৭ সালে এক ফরমান জারি করে হাজি আলী আকবর আমিনকে ‘সেমনানের’ মরুভূমিতে তামা, ব্রোঞ্জ, কয়লা এবং তেলের খনিসমূহের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করেন।