মিল্লাত ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ?

মিল্লাত

অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন বিভিন্ন অমুসলিম সম্প্রদায় মিল্লাত নামে অভিহিত ছিল। অভ্যন্তরীণ শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে সম্প্রদায়গুলো অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। সাধারণত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমেই মিল্লাতগুলোর অভ্যন্তরীণ শাসনকার্য্য পরিচালিত হতো। মিল্লাত-ই-রুম নামে পরিচিত গ্রিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী মিল্লাত হিসেবে পরিগণিত হয়।

মিল্লাত ব্যবস্থাঃ

তুরস্কের ইতিহাসে মিল্লাত প্রথা বা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মিল্লাত প্রথা চৌদ্দটি মিল্লাত বা মণ্ডলীতে বিভক্ত ছিল। ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মিল্লাত ছিল। তারা নিজেরাই তাদের নেতা নির্বাচন করতো। অবশ্য এটি সুলতানের মঞ্জুরি সাপেক্ষ ছিল। তিনি তাকে ‘বিরতি’ বা অভিযোগপত্র প্রদান করতেন। তাদের সম্মানজনক পদবি ছিল। তারা প্রাদেশিক শাসন পরিষদের সভ্য হতেন, রাজনৈতিক এবং কতকগুলো শাসন ও বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে মিল্লাত ছিল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

মিল্লাত প্রথার মাধ্যমে তুর্কি সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায় ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। খ্রিস্টানদের পৃথক ধর্মীয় আদালত ছিল এবং তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মুসলমানদের থেকে পৃথক ছিল। এর ফলে বিশাল তুরস্ক সাম্রাজ্যে তুর্কি, গ্রিক, বুলগার, সার্ব, ওয়ালচিয়ান, বসনীয় মন্টেনিগ্রো ইত্যাদি বিভিন্ন জাতির বসবাস থাকায় তুরস্ক ছিল একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতির বিপরীতমুখী ভাবধারা তুর্কি ঐক্যের পরিপন্থী ছিল। ১৮৩৯ এবং ১৮৫৬ সালের দুটি সংস্কার সম্বন্ধীয় ঘোষণায় অমুসলিম নাগরিকদের অবস্থা এবং মিল্লাতগুলোর শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়া হয়। বিভিন্ন মিল্লাতে সংবিধান প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক শাসনব্যবস্থা প্রচলন করার প্রচেষ্টা কতখানি সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। তবে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে নতুন সংস্কারাবলি অমুসলিম নাগরিকদের মনে স্বাধীনতার বীজ বপন করে।

আঠারো শতকের শেষভাগ হতে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তিবর্গ যখন ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয় তার পর হতে ওসমানীয় সুলতানদের মিল্লাতগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কিছুটা সীমিত হয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *