উনিশ শতকের শেষার্ধে এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপে যে স্বার্থপর ও সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ দেখা দিয়েছিল তারই চরম পরিণতি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথমার্ধের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মার্নের যুদ্ধ ও ট্রেঞ্চ যুদ্ধ।
মার্নের যুদ্ধঃ
১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হয়, তখন যুদ্ধে লিপ্ত শক্তিগুলোর মধ্যে জার্মানি ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। ফ্রান্সের উত্তরাংশের শহরের পর শহর অধিকার করে জার্মান বাহিনী প্যারিসের পনেরো মাইলের মধ্যে এসে পৌছায়। এইরূপ পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস হতে বোরদোকসে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯১৪ সালে ৫ই সেপ্টেম্বর হতে ১০ই সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত প্যারিস ও ভার্দুনের মধ্যবর্তী প্রায় একশত মাইল জুড়ে বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইতিহাসে এটাই ‘মার্নের যুদ্ধ’ হিসেবে খ্যাত। ফরাসি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল জোফ্ররের অধীনস্থ সেনাপ জেনারেল ফচ এ যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে জার্মান বাহিনী পরাজিত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
ট্রেঞ্চ যুদ্ধঃ
মার্নের যুদ্ধের পর মিত্র বাহিনী আইসনে নদীর তীরে জার্মান বাহিনীর উপর আঘাত হানতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। জার্মান বাহিনী বেলজিয়ামের পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে আক্রমণ চালায় এবং ১০ অক্টোবর এন্টোঢার্প, ওস্টেন্ড, ডানকার্ক ও ক্যালে অধিকার করে কিন্তু ইয়াসির নদীর তীরে তারা মিত্র বাহিনীর মুখোমুখি হয়। অক্টোবরের শেষ নাগাদ দুই পক্ষ নিউপোর্ট হতে সুইজারল্যান্ডের উত্তর সাগর পযর্ন্ত ট্রেঞ্চ বা পরিখা খুঁড়ে দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধ ১৯১৮ সালের মার্চ পযর্ন্ত চলে। এই যুদ্ধ ইতিহাসে ট্রেঞ্চ যুদ্ধ নামে পরিচিত।
জার্মান বাহিনী মার্নের যুদ্ধে ফরাসি সেনাপতি জেনারেল ফচের নিকট পরাজিত হন। কিন্তু ট্রেঞ্চের যুদ্ধ দীর্ঘকালব্যাপী হওয়ায় জার্মান বাহিনী গোটা বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের উত্তর পূর্বাংশের অনেকখানি অধিকার করে নেয়।