মহরম সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ শোকস্মৃতি বিজড়িত কঠিন সত্য প্রতিষ্ঠার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্ব। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরাই আনুষ্ঠানিকভাবে এ মহরম পর্ব উদযাপন করে থাকে। আরবি বছরের মহরম মাসের প্রথম দশদিনব্যাপী এ শোক পর্ব পালন করা হয়। এ জন্য এ পর্বের অন্য নাম আশুরা।
পটভূমিঃ
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদের (সা) এর পৌত্র হযরত ইমাম হুমাইনের (রা) শাহাদাৎ বরণের পুন্যস্মৃতি স্মরণ করে এ পর্ব পালন করা হয়। হযরত হুসাইন দামেস্কের খলিফা এজিদকে খলিফা বলে স্বীকার না করায় এজিদ হযরত হুসাইনের বিষয়সম্পত্তি দখল করে নেয় এবং চক্রান্ত করে ইসলামের শেষ খলিফা হযরত আলী (রা) ও রসূলুল্লাহ (সা) কন্যা হযরত ফাতেমার কনিষ্ঠ পুত্র হাসানকে বিষ প্রয়োগে নিহত করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এজিদ ও হুসাইন পরিবারের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত ঘটে। কারবালার মরুপ্রান্তরে এজিদের সৈন্যগণ কর্তৃক হযরত হুসাইন (রা) সপরিবারে আক্রান্ত হন। দশ দিন পযর্ন্ত যুদ্ধ করে হুসাইনের আত্মীয়স্বজন অনেকেই অনাহার ও তীব্র তৃষ্ণায় আর্তনাদ করতে করতে পানির অভাবে মারা যান। সীমার কর্তৃক হযরত হুসাইন নির্মমভাবে ফোরাত নদীর তীরে শাহাদৎ বরণ করেন।
শোকের স্মৃতিঃ
হযরত হুসাইনের এই শোকাবহ মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে মহরম পালন করা হয়। এ নিদারূণ হৃদয়বিদায়ক শোকের স্মৃতি আজও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে শোকাবেগ জাগ্রত করে তোলে। হযরত হুসাইনের রুহের মাগফিরাতের জন্য মহরম মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রোযা রাখে, তৃষ্ণার্তদের পানি ও সরবৎ পান করান ও দান করেন।
মিছিলঃ
মহরম মাসের দশ দারিখ কারবালার শোকাবহ ঘটনা স্মরণে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ শোক প্রকাশের জন্য তাজিয়া নির্মাণ করে ‘হায় হুসাইন’, ‘হায় হাসান’ বলে শোক মিছিল বের করে। এ মাসে মুসলমানগণ হযরত হাসান (রা) ও হুসাইনের (রা) আত্মার কল্যাণ কামনায় কুরআন পাঠ ও রোযা রাখে। ঢাকার হোসেনী দালান ও ইমামবাড়া থেকে প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী শোক মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলে কারবালার যুদ্ধের অনুকরণে লাঠি, সড়কি ও তরবারি কৃত্রিম যুদ্ধ প্রদর্শন করে।
ধর্মীয় অজ্ঞতাঃ
মহরম উৎসব পালনে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়। তাজিয়া বানিয়ে ঘোড়া সাজিয়ে, ড্রাম পিটিয়ে মিছিল করার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্মীয় তাৎপর্য্য নেই এটা নিতান্তই আবেগের ব্যাপার। অন্যদিকে ইসলাম যে-কোনো অসংযত আবেগকে প্রশ্রয় দেয় না।
হযরত হুসাইন-হাসানের রুহের মংগলের জন্য দোয়া, দান-খয়রাত এবং শোক পালন করাই মহরমের মুখ্য উদ্দেশ্য হলেও মহরম থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করাও গৌরবের বিষয়।