ভোক্তার উদ্বৃত্ত বলতে কি বোঝ?

ভোক্তার উদ্বৃত্ত

ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটি ১৮৪৪ সালে প্রখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ ডুপিটি কর্তৃক প্রথম ব্যবহৃত হয়। জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ‘Relative Utility’ পরিমাপে তিনি সচেষ্ট হন। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মার্শাল তার প্রচেষ্টাকে সফল করে তুলতে ভূমিকা রাখেন। মার্শাল তার ‘Principles of Economics’ গ্রন্থে ডুপিটির ধারণাকে ‘Consumer’s Surplus’ বা ভোক্তার উদ্বৃত্ত নামে ব্যবহার করেন।

ভোক্তার উদ্বৃত্ত

ভোক্তা কেনো দ্রব্য থেকে এর মূল্যের অতিরিক্ত যে তৃপ্তি লাভ করে তাকে ভোক্তার উদ্বৃত্ত বা ভোগকারীর উদ্বৃত্ত বলে। অধ্যাপক মার্শালের মতে, “কোনো ব্যক্তি কোনো দ্রব্যের জন্য যে দাম দিতে ইচ্ছুক এবং যে দাম সে প্রকৃতপক্ষে দেয় এ দুয়ের পার্থক্যই হলো ভোক্তার উদ্বৃত্ত।

” অধ্যাপক স্যামুয়েলসনের মতে, “There is always a sort of gap between total utility and market value. This gap is in the nature of a surplus, which the consumer gets because he receives more than he pays for.” অর্থাৎ মোট উপযোগ এবং বাজার মূল্যের মধ্যে একটি ব্যবধান বিরাজ করে। এ ব্যবধান ভোক্তা উদ্বৃত্তের আকারে পেয়ে থাকে। কারণ ভোক্তার মূল্যের চেয়ে তার প্রাপ্ত উপযোগ বেশি।

অধ্যাপক টাউজিগের মতে, “কেউ মোট যে দাম দিতে রাজি হতো এবং মোট যে দাম দেয় তার পার্থক্যই হলো ভোক্তার উদ্বৃত্ত।” অধ্যাপক মেহেতার মতে, “কোনো ব্যক্তি ক্রীত দ্রব্য থেকে যে পরিমাণ তৃপ্তি লাভ করে তা থেকে ঐ দ্রব্য লাভের জন্য যে পরিমাণ অর্থব্যয়জনিত তৃপ্তি ত্যাগ করতে হয় এটি বাদ দিলে যে পরিমাণ তৃপ্তি বেশি হয় তাই ভোক্তার উদ্বৃত্ত।” সুতরাং কোনো দ্রব্যের মোট তৃপ্তি থেকে এর মোট মূল্য বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই ভোক্তার উদ্বৃত্ত।

ভোক্তার উদ্বৃত্ত ধারণাটির বহুবিধ গুরুত্ব থাকায় অর্থনীতিবিদ রবার্টসন একে ‘জ্ঞানের দিক থেকে শ্রদ্ধার যোগ্য এবং ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপের পরিচালক’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েরসনসহ আরো অনেকের মতে, এ ধারণাটির তত্ত্বগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকতে পারে, তবে এর বিশেষ বাস্তব উপযোগিতা নেই।