ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে নক্ষত্রের সমস্ত ভর একটিমাত্র বিন্দুতে একীভূত হয়। ফলে মহাকর্ষ বল এতে এতটাই বেশি হয়ে থাকে যে আলোও এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে না। মহাকাশের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু এই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে, এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে কোনো বল কিংবা শক্তিই এর থেকে পালাতে পারে না।
জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে ব্ল্যাকহোল হলো বিপুল পরিমাণ ভরবিশিষ্ট এমন একটি বস্তু যাতে স্বল্প তরঙ্গের কোনো আলোকরশ্মি প্রবেশ করলেও তা শোষণ করে নেয়। কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ বল এতই শক্তিশালী যে এর ভেতর থেকে কোনো কিছুই (এমনকি আলোও) বেরিয়ে আসতে পারে না। এমনকি এর পাশ দিয়ে যাওয়া যে কোন বস্তুকে এটা নিজের দিকে টেনে নেয়। আসলে এর কম ক্ষেত্রফলে অনেক বেশি ভর নিযুক্ত থাকে এবং এর ঘনত্ব অনেক বেশি হয়। যত বেশি বস্তু কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে হারিয়ে যাবে, কৃষ্ণগহ্বরের আকৃতি দিনে দিনে ততই বড় হবে। আকাশের তারাদের ভেতরের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সেই তারার মৃত্যু হয়। তখন মৃত তারার ভর যদি আমাদের সূর্যের ভরের তিনগুণ বেশি হয় তবেই সেই মৃত তারা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়।
ব্ল্যাকহোল বড়, ছোট, মাঝারি এরকম অনেক ধরনের হতে পারে। তবে তিন ধরনের ব্ল্যাকহোল সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একটি হচ্ছে স্ট্যালার মাস ব্ল্যাকহোল, অপরটি হচ্ছে হচ্ছে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল এবং শেষটি হচ্ছে ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাকহোল বা মাঝারি আকারের ব্ল্যাকহোল। সবচেয়ে ছোট যে ব্ল্যাকহোল আছে সেটি শুধুমাত্র একটি অণুর তৈরি, কিন্তু এদের ভর প্রায় এভারেস্ট মাউন্টেইন এর সমান হতে পারে! আবার কোনো কোনো ব্ল্যাকহোল কয়েক লক্ষ সূর্যের ভরের সমান হতে পারে, যা সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। প্রকৃতপক্ষে সকল গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মাঝখানে একটি সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোল থাকে। এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে সমগ্র ছায়াপথ ঘুরতে থাকে।
স্টেলার ব্ল্যাকহোল নামে এক সুবিশাল ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যাদের ভর সূর্যের ভরের ২০ গুণ প্রায়। ১৯৬৭ সালে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন হুইলার প্রথম “ব্ল্যাক হোল” নাম উপস্থাপন করেন। তখন ব্ল্যাকহোল কেবলমাত্র একটি ধারণা ছিল,কিন্তু ১৯৭১ সালে প্রথম ব্ল্যাক হোলকে চিহ্নিত করা হয়। তারপর ১০ এপ্রিল ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (Event Horizon Telescope) এর মাধ্যমে প্রথম ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের ছবি নেওয়া হয়।