বেগম রোকেয়া পরিচিতি

বেগম রোকেয়া পরিচিতি

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন মুসলিম নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত, নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রধান অগ্রদূত। তিনি বাংলার মুসলিম নারী সমাজকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অবরোধ প্রথার অন্তরালের চরম নির্যাতিত অবস্থা থেকে মুক্ত হবার জন্য আকুল আহবান জানিয়েছেন। নারী সমাজকে শিক্ষিত করে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করাই ছিলো তার আজীবন সাধনা।

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ

বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামের প্রসিদ্ধ সাবির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহিরুদ্দিন আবুল আলী সাবির ধনী ও বিলাসী পিতার চার স্ত্রী, নয় পুত্র এবং চয় কন্যার রক্ষণশীল পরিবারের প্রথমা স্ত্রী রাহাতুন্নেসার কন্যা তিনি।

শিক্ষালাভঃ

বাল্যকাল থেকে বহুবিবাহ, বিলাসিতা, অবরোধ প্রথা এবং নারীর অসম অবস্থান ও নির্যাতন তার মনেগভীর প্র্রভাব বিস্তার করে। সহোদর ভ্রাতৃদ্বয় খলিল সাহেবের এবং ইব্রাহিম সাহেবের সাহায্যে তিনি রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে গোপনে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শেখেন। রোকেয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ও তার প্রতিভা ও মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারায় অভিভূত হয়ে তার নারী মুক্তি আন্দোলনে উৎসাহ দান করেন।

বিবাহঃ

ষোল বছর বয়সে বিহারের অন্তর্গত ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯০৯ সালে রোকেয়াকে নিঃসন্তান রেখে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন পরলোক গমন করেন।

নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়াঃ

স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯০৯ সালে মাত্র দশ হাজার টাকা সম্বল করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাত্র আটজন ছাত্রী এবং দুখানা বেঞ্চ নিয়ে ভাগলপুরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল পার্লস স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৫ সালে এর ছাত্রীসংখ্যা দাঁড়ায় পচাঁশি। ১৯১৭ সালে তদানীন্তন বড়লাটের স্ত্রী রোকেয়ার সুনাম শুনে স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। স্কুলের আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও পরিবেশ দেখে অভিভূত হয়ে তিনি স্কুলটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। দার্শনিক রোকেয়া শিক্ষাব্রতী রোকেয়া এবং নারী মুক্তি আন্দোলনে উৎসর্গীকৃত রোকেয়ার সাধনার প্রকৃষ্ট প্রমাণ ও স্কুল পরিচালনার সাফল্যে নিহিত।

মুসলিম নারী মুক্তি আন্দোলনে বেগম রোকেয়াঃ

অবরোধ প্রথার অন্তরালের চরম অবহেলা ও নির্যাতিত জীবন থেকে মুক্ত করে নারী সমাজকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করা ছিলো রোকেয়ার নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ। নারী জাতির সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে বেগম রোকেয়া ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ গঠন করেন। দরিদ্র বালিকাদের শিক্ষার সুযোগ দান এবং মুসলমান অবিবাহিত, বিধ্বা এবং আশ্রয়হীনা নারীদের কর্মসংস্থান করা ছিলো এ সংস্থার মূল উদ্দেশ্য।

সাহিত্য সাধনাঃ

তৎকালিন মুসলিম নারী সমাজের করুণ অবস্থা সম্পর্কে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে তিনি অনেকগুলো পুস্তক রচনা করেছেন। তার রচিত পুস্তকগুলোর মধ্যে; মতিচুর (দুখন্ড), অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, মুক্তিফল ইত্যাদি।

মৃত্যুঃ

বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর শুক্রবার রাত এগারটা পযর্ন্ত ‘নারীর অধিকার’ প্রবন্ধটি লিখতে থাকেন। আকস্মাৎ তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৫২ বছর। শোধপুরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বেগম রোকেয়া বাংলার নারী সমাজের একমাত্র আদর্শ। যুগ যুগ ধরে বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে শ্রদ্ধাসহকারে স্মরণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *