বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচিতি

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে পৃথিবীর বুকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্ম পরিচয়

রবীন্দ্রনাথ ১৮৬১ সালের ৭ মার্চ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলেন। তিনি ছিলেন মাতা-পিতার সবচেয়ে ছোট ছেলে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা জীবন

চার বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনা শুরু হয়। বিভিন্ন বিষয়ে গৃহ শিক্ষকগণ তাকে শিক্ষা দিতেন। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের বাঁধাধরা পড়াশোনা তার মোটেই ভালো লাগত না। পরে তাকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও বেঙ্গল একাডেমীতে ভর্তি করা হয়। তবে স্কুলে তিনি বেশিদিন পড়েন নি। বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে এবং নিজে পড়াশোনা করে তিনি অনেক জ্ঞানের অধিকারী হন। শিক্ষালাভের জন্য রবীন্দ্রনাথ চৌদ্দ বছর বয়সে বিলাত যান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাড়ির পরিবেশ

রবীন্দ্রনাথের বাড়ির পরিবেশ ছিল চমৎকার ও সমৃদ্ধ। একদিকে প্রাচুর্য্য-অন্যদিকে বিদ্যাশিক্ষা, গান, কবিতা এবং নাটক অভিনয়ের সুন্দর একটা পরিবেশে রবীন্দ্রনাথের বাল্যজীবন কেটেছে। এ পরিবেশ তার সাহিত্যচর্চার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল। রবীন্দ্রনাথের পিতা রবীন্দ্রনাথকে খুব ভালো বাসতেন, কবিতা রচনায় উৎসাহ দিতেন, হিমালয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময় তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যচর্চা

ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের লেখার অভ্যাস গড়ে উঠে। রবীন্দ্রনাথের বৌদি শ্রীমতি কাদম্বরী দেবী এবং দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথকে কাব্যচর্চায় বিশেষ উৎসাহ দিতেন। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের পরিবারে প্রায় সকলেই সাহিত্যচর্চা করতেন। এ জন্য তিনি সবার কাছে সমাদর পেতেন ও উৎসাহ পেতেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১৯১৩ সালে তিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের অনুদিত ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য তাকে পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ সাহিত্য-পুরস্কার দেয়া হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশভ্রমণ

রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তার বিদেশ ভ্রমণের পরিচয় ‘রাশিয়ার চিঠি’ ‘ইউরোপ প্রবাসীর পত্র’ ‘পারস্যে’ ‘জাপান যাত্রীর ডায়েরী’ ইত্যাদি বইয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ ও ১৯২৬ সালে মোট দু’বার বাংলাদেশে আসেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, চাঁদপুর ও কুমিল্লা যান। তাকে সর্বত্র বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। তিনি জমিদারি পরিচালনার জন্য দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন সাজাদপুর, পতিসর ও শিলাইদহে। তার অনেকগুলো গল্পে, কবিতায় ও চিঠিপত্রে রয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতির পরিচয় ও সমাজ চিত্র। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তারই রচিত গান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজসেবা

রবীন্দ্রনাথ বোলপুরে ‘শান্তিনিকেতন’ নামক এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এতে তিনি দেশ বিদেশের নানা পণ্ডিতজনকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিতেরা এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও পড়াতেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনাবলী

রবীন্দ্রনাথের রচনা অজস্র। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যা তিনি লিখেন নি। ‘সোনার তরী’, ‘মানসী’, ‘বলাকা’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘নৈবেদ্য’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, প্রভৃতি তার প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ। ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘শেষের কবিতা’ তারা বিখ্যাত উপন্যাস। ‘গল্পগুচ্ছ’ রবীন্দ্রনাথের গল্পের সংকলন। ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’ ইত্যাদি ছোটদের নিয়ে লেখা কবিতা বই।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যু

১৯৪১ সালের ১২ আগস্ট, ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পরলোক গমন করেন। রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী ও গান বাংলাভাষাভাষীদের অনন্ত প্রেরণার উৎস ও অমূল্য সম্পদ। তার অবদান চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।