ফরোয়ার্ড পলিসি কি?

ফরোয়ার্ড পলিসি কি

যে সকল ঘটনা দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছিল ব্রিটিশ সরকারের Forward Policy তার মধ্যে অন্যতম। আর এ যুদ্ধ ছিল আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। এ যুদ্ধ পরিশেষে আফগানিস্তানের জন্য চরম বিপযর্য় ডেকে আনে। ফরোয়ার্ড পলিসির ফলশ্রুতিতেই আফগানিস্তানের তিনটি জেলা ব্রিটিশদের অধিকারে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করা হয়।

ফরোয়ার্ড পলিসি

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ আধিপত্য যাতে নিষ্কণ্টক হয় যে লক্ষ্যে আফগানিস্তানের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা ব্রিটিশদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ উনিশ শতকের প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল। অবশ্য ব্রিটিশ ভারতের কোনো কোনো ভাইসরয় আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে বরং সম্পর্কোন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু ১৮৭৪ সালে বেনজামিন ডিজরেলি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড চৌলস বারি ইন্ডিয়া অফিসের সেক্রেটারি নিযুক্ত হলে ইংল্যান্ডের এ নীতির পরিবর্তন ঘটে। তারা উভয়েই আফগানিস্তানের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ছিলেন। আফগানিস্তানের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা যে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাই ‘ফরোয়ার্ড পলিসি’ নামে অভিহিত।

ফরোয়ার্ড পলিসি এবং আমির শের আলী

আফগান আমির শের আলী ১৮৬৯ সাল হতে ১৮৭৯ সাল পযর্ন্ত রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হন এবং এ সংকটের ফলশ্রুতিতেই দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। আফগান আমির অতিমাত্রায় ব্রিটিশ সাহায্য-সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তথাপি Lord mayo বা North Brook তেমন কোনো সুযোগ তাকে দেন নি। অতঃপর ১৮৭২ সালে Lord Mayo নিহত হলে আফগান ব্রিটিশ সম্পর্কের  টানাপড়েন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ডিসরেলির নেতৃত্বে নিরপেক্ষতা নীতি বর্জিত হয়। ডিসরেলি লর্ড লিটনকে ভাইসরয় করে ভারতে পাঠান। আমির শের আলীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে লর্ড লিটন সচেষ্ট ছিলেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্রিটিশ সরকার আগ্রহী ছিল। কিন্তু একটি শর্ত ছিল যে হিরাতে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট অবস্থান করবেন। কিন্তু আমির শের আলী এ শর্ত মেনে নিতে রাজি ছিলেন না।

ফরোয়ার্ড পলিসির প্রয়োগ

১৮৭৮ সালের ১৭ আগস্ট লর্ড লিটন শের আলীর কাছে এক পত্র লিখেন। কিন্তু শের আলী তার জবাব দিতে বিলম্ব করেন। এতে লর্ড লিটন ক্রুদ্ধ হয়ে আফগানিস্তানকে ধ্বংস করার নীতি গ্রহণ করে বলপূর্বক স্যার নেভিল চেম্বারলেনের নেতৃত্বে কাবুলের উদ্দেশ্যে একটি ব্রিটিশ মিশন পেশোয়ারে পাঠান। রুশ আগ্রাসনের আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য আফগানিস্তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করাই ছিল ফরোয়ার্ড পলিসির মূল লক্ষ্য। ব্রিটিশ সরকার লর্ড লিটনকে নির্দেশ দেন যে, আফগানিস্তানের সাথে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করতে হবে, আর আমির শের আলী তা অস্বীকার করলে আফগানিস্তানে অভিযান প্রেরণ করে ব্রিটিশ সমর্থক শাসককে ক্ষমতায় বসাতে হবে।

আফগানিস্তানের ইতিহাসে ফরোয়ার্ড পলিসি ও ২য় আফগান যুদ্ধ একটি তাৎর্পযপূর্ণ ঘটনা। কারণ ফরোয়ার্ড পলিসির সূত্র ধরেই দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধ সংঘটিত হয় ও আফগানিস্তানের সাময়িক রাজনৈতিক বিপযর্য় ঘটে।