প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা

১৯১৪ সালে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৪৭৯ হতে ১৯১৪ সালের মধ্যে ইউরোপ তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনা ও সংকটের চরম পরিণতি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি তুরস্ক যখন বলকান সংঘের সাথে যুদ্ধ করে বহু বিভক্ত ও বিপযর্স্ত হয়ে পড়ে সেই সংকটময় মুহূর্তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণভেরি বেজে উঠে।

১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর মিত্রশক্তিবর্গ কর্তৃক জার্মানির সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাঃ

সারায়েভোর হত্যাকাণ্ডের জন্য অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ৪৮ ঘন্টার নোটিশে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অস্ট্রিয়ার এ ঘোষণায় রাশিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। কেননা শার্ভ জাতির রক্ষক এবং বলকানে তার স্বার্থ জড়িত থাকায় রাশিয়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করতে শুরু করে। এদিকে ত্রিশক্তি চুক্তি অনুযায়ী জার্মানি অস্ট্রিয়ার পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করে। ইংল্যান্ড এদের মধ্যে আপস করতে চাইলে তা ব্যর্থ হয়।

রাশিয়া জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ১৮৯৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স যুদ্ধে যোগদান করে। এদিকে জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণ করার জন্য বেলজিয়ামের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হয়ে বেলজিয়ামের আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষতার চুক্তি ভঙ্গ করলে ইংল্যান্ডও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে পৃথিবীর প্রধান প্রধান দেশমাত্রই এ যুদ্ধে শেষ পযর্ন্ত যোগ দিয়েছিল। ইতালি, জাপান, চীন, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

আমেরিকা শেষের দিকে এসে যুদ্ধে যোগদান করে। রুশ-তুর্কি বিরোধ বহুকাল ধরে চলছিল বিধায় তুরস্ক জার্মানির দিকে যোগদান করে, বুলগেরিয়াও এ পক্ষে যোগদান করে। আর এভাবেই এ যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।

বলকান অঞ্চলের ছোট একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করে ঐ অঞ্চলে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, ধীরে ধীরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে এক সময় বিশ্বযুদ্ধে রূপলাভ করে। এ যুদ্ধ ছিল সর্বগ্রাসী। কমবেশি বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রিই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।

ফলাফলের দিক থেকে বিচার করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক সংগ্রাম বলে বিবেচনা করা ঠিক হবে না; প্রকৃতপক্ষে এ যুদ্ধকে একটি আন্তর্জাতিক বিপ্লব বলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *