কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে গেলে উৎপাদনকারীকে উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করতে হয়। কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে উৎপাদন কাজে নিয়োগ করার জন্য যে ব্যয় হয় তাকে উৎপাদন ব্যয় বলে। অর্থনৈতিক আলোচনায় উৎপাদন ব্যয় সম্পর্কে তিনটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তন্মধ্যে প্রকৃত ব্যয় অন্যতম।
প্রকৃত ব্যয়
অধ্যাপক মার্শাল এবং তার অনুসারিগণ প্রকৃত ব্যয়ের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তিনি ও তার অনুসারিগণ উৎপাদন ব্যয়ের আর্থিক বিশ্লেষণে সন্তুষ্ট নন। তাদের মতে, উৎপাদনের জন্য উৎপাদকগণ যে অর্থ ব্যয় করেন তার পিছনে রয়েছে প্রকৃত ব্যয়। কেননা যেকোনো উপাদান ব্যবহার করলে তার ক্ষয় হয়। যেমন-শ্রম ব্যবহার করলে শ্রমিকের কষ্ট হয় এবং সঞ্চয় করতে হলে ভোগ থেকে বিরত থাকতে হয় বা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাই এগুলো উৎপাদনের প্রকৃত ব্যয়। মার্শালের মতে, উপকরণের ব্যবহারের ফলে যে অনুপযোগের সৃষ্টি হয় বা যে কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তার দরুনই উপকরণগুলোকে পারিশ্রমিক দিতে হয়। এ অনুপযোগই প্রকৃত ব্যয়। অনুরূপভাবে, কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে গিয়ে উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি বহনজনিত যে অনিশ্চয়তা ও মানসিক যাতনা ভোগ করতে হয় তা-ই উদ্যোক্তার প্রকৃত ব্যয়। তবে ভূমির যোগান প্রকৃতি প্রদত্ত বলে এর কোনো প্রকৃত ব্যয় নেই।
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ প্রকৃত ব্যয়ের সমালোচনা করে বলেন যে, যেহেতু এ ব্যয় একটি মানসিক ধারণা, তাই এটি পরিমাপযোগ্য নয়। যখন কোনো শ্রমিক পরিশ্রম করে তখন তার ত্যাগের পরিমাণ কত তা নির্ধারণ করা যায় না। কোনো শ্রমিক সাধারণ কাজে যথেষ্ট পরিশ্রম করে থাকে। কিন্তু উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা বরং আরাম করে থাকে। তাই কর্ম ও ত্যাগের পরিমাণ দ্বারা প্রত্যেক লোকের পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় না। তবে একথা অনস্বীকার্য্য যে, উৎপাদন ব্যয় যোগানকে প্রভাবিত করে। কিন্তু মানবিক অনুভূতির আলোকে আলোচিত এ প্রকৃত ব্যয় যোগানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে বর্তমানে এ ব্যয় নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয় না।
ব্যয় তত্ত্বে প্রকৃত ব্যয়ের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে সুযোগ ব্যয় ধারণাটি অধিক গ্রহণযোগ্য। অধ্যাপক মার্শাল হলেন প্রকৃত ব্যয়ের প্রবক্তা। তার মতে, কোনো দ্রব্য উৎপাদনের পিছনে উৎপাদক যে অর্থ ব্যয় করেন তাতে প্রকৃত ব্যয় লুক্কায়িত থাকে।