আরবি লিপি মালার সবচেয়ে চাতুর্য্যপূর্ণ কৌশল হচ্ছে তুঘরা লিপি পদ্ধতি। A Papadopoulo বলেন, “আরবি লিপি কলার অসামান্য রৈখিক গুণাবলী এবং নির্বস্তুক বহিঃপ্রকাশের যে ধারণা রয়েছে তা তুরস্কে তুঘরা নামে এক আকর্ষণীয় লিপি শৈলীতে রূপান্তরিত হয়।” তুঘরা লিপিশৈলীর অপর একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রকরণ হচ্ছে ইহা কখনো কখনো কুফী রীতিতে লিপিবদ্ধ হরফগুলোর উপরের ভাগে মানুষ ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি দ্বারা অলঙ্কৃত।
তুঘরা পদ্ধতি
হযরত আলী (রাঃ) এর শৌর্য্য ও বীর্যের প্রতীক সিংহ অথবা বাঘের আকৃতিতে তুঘরার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। একে ‘নাদ-ই-আলী’ নামে অভিহিত করা হয়। এ সমস্ত নিদর্শন ভূত-প্রেতের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য গৃহে রাখা হয়। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জীবজন্তুর এসব প্রতিকৃতি মুসলমানদের গৃহে আকর্ষণীয় অলঙ্করণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গৃহসজ্জা ছাড়াও ‘তুঘরা’ লিপি শৈলীতে লিপিবদ্ধ মোটিভ ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতার অধিকারী। জিয়াউদ্দীন বলেন “উর্দু ভাষায় লিপিকৃত বাঘের প্রতি হিন্দু-মুসলিম অথবা যার এ লিপিতে বিশ্বাস আছে যে যদি উহা ঘরে টাঙিয়ে রাখে তবে সে সকল প্রকার দুষ্ট ভূত-প্রেতের প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে। একটি বিশেষ শুভ মুহূর্তে তুঘরা লিপিবদ্ধ করা হয়। যাদু বিদ্যা দ্বারা জিনের আচর থেকে মুক্তি পাবার সার্বজনীন রূপ হচ্ছে তুঘরা।”
অটোমান সাম্রাজ্যে শাব্দিক অর্থে তুঘরা বলতে অটোমান সুলতানদের সীলমোহরের লিপিকে বুঝাত। তুর্কী সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় তুঘরা রাজকীয় সীলমোহরের লিপি হিসেবে সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করে। উদাহরণ স্বরূপ তুর্কী সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ এবং মহান সোলাইমানের রাজকীয় স্বাক্ষর সম্বলিত সীল মোহরের উল্লেখ করা যায়।
বাংলার সুলতানী আমলের স্থাপত্য রীতিতে প্রথম আরবি শিলা লিপিতে তুঘরা রীতির ব্যবহার দেখা যায়। সামমুদ্দীন আহম্মদ বলেন, মুসলিম লিপিকলার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য এবং অলঙ্কারিত রীতিতে উদ্ভূত রীতি হচ্ছে তুঘরা। বাংলার মুসলিম শাসনের প্রথম যুগেই এ শৈলী ব্যবহৃত হয়েছে।
তুঘরা লিপি শৈলীর ব্যতিক্রমধর্মী অথচ সৃজনশীল শৈল্পিক প্রকাশ দেখা যাবে একটি নাসপতি বা আপেল বা ইমান মুফাসসাল দ্বারা গঠিত একটি নৌকার আকৃতিতে।
মুসলিম হস্ত লিখন শিল্পে তুঘরা কোন একটি স্বতন্ত্র্য লিখন পদ্ধতি নয়। কুফিক, নাসক, সুলস ও তাদের স্বগোত্রীয় পদ্ধতি বিশেষ অলঙ্করিক প্রক্রিয়ায় উপস্থাপিত হয়ে তুঘরা নাম ধারন করে।