ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব কি ?

ডার্ক ওয়েব হল হলিউড ছবির একটি দৃশ্যের সাদ্দৃশ যেখানে গডফাদার তার পোষা খুনীর সাথে কখনো মুখোমুখি সাক্ষাত না করে এক অতি গোপন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে হুকুম দিয়ে যান, অথবা কি মনে পড়ে আঞ্জেলিনা জুলি অভিনীত ‘Hacker’ ছবিটির কথা যেখানে অপরাধীরা এক নাম না জানা নেটওয়ার্কের ভেতর নানা অপরাধ করত—যেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নাক গলাতে পারত না?
আপাতদৃষ্টিতে রূপালী পর্দার এসব সাই-ফাই মুভিগুলোকে শুধুই গল্প মনে হলেও এইসব মুভির অজানা নেটওয়ার্কের মতই আমাদের অতিচেনা ইন্টারনেটের আছে এক অন্ধকারজগত হল ডার্ক ওয়েব …

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে প্রসার পেয়েছে ইন্টারনেট, আর তা আজ মহাসমুদ্রের ন্যায় বিশাল এক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে সক্ষমতা বেড়েছে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর। বিশেষ করে Google এর নাম বলতেই হবে, যা এখন বিশ্বব্যাপী অন্যতম এক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। একটি নেট সেশনের কথা কি আমরা চিন্তা করতে পারি গুগলকে ছাড়া ? অসম্ভব ! ডার্ক ওয়েবও কিন্তু এক প্রকার সার্চ ইঞ্জিন ।
ব্ল্যাক ওয়েবেকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় আর তা হলঃ
- ডিপ ওয়েব
- ডার্ক ওয়েব

ডীপ ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই সমস্ত অংশ যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পায় না কিন্তু আপনি যদি এগুলোর ঠিকানা জানেন তাহলে আপনি এই অংশে যেতে পারবেন।আর ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই অংশ যেখানে কনভেনশনাল উপায়ে আপনি ঢুকতে পারবেন না, প্রচলিত ব্রাউজারগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে প্রবেশ করতে গেলে আপনাকে বিশেষ সফটওয়্যার এর সহায়তা নিতে হবে।ডার্ক ওয়েব এর থেকে ডিপ ওয়েবে প্রবেশ আরো ভয়ংকর এবং কঠিন।
ইন্টারনেটের এই অংশের উৎপত্তি কিভাবে হল? একদম সঠিক করে বলা অসম্ভব।
প্রকৃতপক্ষে আপনি বা আমি কেউই ইন্টারনেটে একা নই! আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ডাউনলোড নজরে রাখছে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার। তাদের কাছে আপনার পুরো লগ থাকে আর যেকোন প্রয়োজনে তারা তা সরবরাহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তার মানে হল আপনার চলাচলের কোন স্বাধীনতা নেই!টর একটি ডার্ক ওয়েব সাইট ।

নানা সময়ে বিশ্ব ইন্টারনেটের নানা গ্রুপ এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে যেখানে তারা খুব গোপনে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবে। সামরিক বাহিনী, বিপ্লবী, হ্যাকার, এমনকিই খোদ প্রশাসনই এমন এক ব্যবস্থা চেয়েছে যেখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভেতর তথ্য আদান প্রদান করতে পারবে অথবা চুরি যাওয়া তথ্য ফিরে পেতে দর কষাকষি করতে পারবেন অপরাধীদের সাথে। তাছাড়া বিশ্বের অনেকদেশ আছে যেখানকার অনলাইন সেন্সরশিপ খুবই কড়া, ফলাফলস্বরুপ ভিন্নমতালম্বিদের এমন এক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হয়েছে যেখানে সরকার তদারকি করতে পারবে না। আর এভাবেই উৎপত্তি হয়েছে এই অজানা অংশের। সাথে সাথে এটা প্রলুব্ধ করেছে ওই সমস্ত অপরাধীদের যারা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মূল নেটে আলোচনা করতে সাহস পায় না।
ডার্ক ওয়েব : ইন্টারনেট জগতের অন্ধকার রাজ্য আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন
ডার্ক ওয়েব কখন “শুরু” হয়েছিল?
লুকানো ওয়েবটির ইতিহাস ইন্টারনেটের ইতিহাসের মতোই পুরানো। প্রকৃত “শুরুর তারিখ” এর কোনও অফিসিয়াল রেকর্ড পাওয়া যায় নি তবে বিভিন্ন তথ্যানুসারে এটি প্রকাশিত যে , ডার্ক ওয়েব আমরা জানি যেটি আজ ২০০০ সালে প্রকাশের সাথে শুরু হয়েছিল ।
ডিপ ওয়েবে থাকা কি বেআইনী?
ডিপ ওয়েবের সাইটগুলি কেবল নিয়মিত অনুসন্ধান ইঞ্জিন দ্বারা সূচিযুক্ত হয় না। ডিপ ওয়েব নিজেই অবৈধ নয়, তবে কিছু সাইট অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত হতে পারে। এই ক্রিয়াকলাপগুলিতে যোগদান অবৈধ হতে পারে।
ডার্ক ওয়েব নিরাপদ?
ডার্ক ওয়েব অনেকটা বাস্তব জীবনের মতো, সর্বদা অনলাইনে বিপদের একটি উপাদান থাকে এবং ডার্ক ওয়েবটি এর থেকে আলাদা নয়। সুরক্ষা আপেক্ষিক এবং আপনি যাই করেন না কেন আপনার অনলাইন সুরক্ষা বাড়ানো ভাল। এটি করার একটি অন্যতম উপায় হল ভিপিএন ব্যবহার করা, যা আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করতে পারে এবং আপনার আইপি ঠিকানাটি চোখের ছাঁটাই থেকে আড়াল করতে পারে। আমার অন্যান্য নিবন্ধে সেরা ভিপিএন সন্ধান করুন ।

ডার্ক ওয়েবে আপনি কী করতে পারেন?
ডার্ক ওয়েব অনেকটা খোলা ওয়েবের মতো, ফোরামের অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্রাউজ করা পর্যন্ত ডার্ক ওয়েবে আপনি করতে পারেন এমন সমস্ত ধরণের ক্রিয়াকলাপ রয়েছে। তবে ডার্ক ওয়েবে অবৈধ পণ্য এবং পরিষেবাদিও রয়েছে। আমাদের ডার্ক ওয়েব ওয়েবসাইটগুলির তালিকা টোর নেটওয়ার্কে ১০০ টিও বেশি .onion সাইটগুলি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ।
আপনি ডার্ক ওয়েবে কী কিনতে পারবেন?
ডার্ক ওয়েব হল একটি নিয়ন্ত্রণহীন মার্কেট যেখানে লোকেরা যে কোনও কিছু কিনতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, অবৈধ ওষুধ, অবৈধ বন্যজীবন, ভয়াবহ ভিডিও, নকল পাসপোর্ট, নেটফ্লিক্স অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, এমনকি হিটম্যান ভাড়াও করতে পারে ।
আপনাকে কি টরে ট্র্যাক করা যেতে পারে?
টোর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা আপনার পরিচয় ট্র্যাক করা শক্ত করে তোলে তবে অসম্ভব নয়। গোপনীয় পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য নিরাপদ হল Express VPN.
ডাকডাক কি ডার্ক ওয়েব?
ডাকডাকগো হল একটি অনুসন্ধান ইঞ্জিন যা ডোনাল ওয়েবে অনন্য। এটি নিজেই ডার্ক ওয়েব নয়।
এখন প্রশ্ন হল ডীপ ওয়েবে কেন সার্চ ইঞ্জিন সার্চ করতে পারে না?

এর কারণ হল সার্চ ইঞ্জিনগুলো তাদের সার্চ তদারকি করে এক ধরনের ভার্চুয়াল রোবট তথা Crawler দিয়ে। এই Crawler গুলো ওয়েবসাইটের HTML tag দেখে ওয়েবসাইটগুলোকে লিপিবদ্ধ করে।তাছাড়া কিছু কিছু সাইট থেকে সার্চ ইঞ্জিনে লিপিবদ্ধ হওয়ার জন্য অনুরোধ যায়। এখন যে সমস্ত সাইট এডমিন চান না যে তাদের সাইটটি সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে না পাক, তারা Robot Exclusion Protocol ব্যবহার করেন যা Crawler গুলোকে সাইটগুলো খুঁজে পাওয়া বা লিপিবদ্ধ করা থেকে বিরত রাখে। কিছু সাইট আছে ডাইনামিক অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এই ধরণের সাইটের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব, আর Crawler এর পক্ষে এই সব করা সম্ভব হয় না। কিছু সাইট আছে যেগুলোতে অন্য সাইট থেকে লিংক নেই। এগুলো বিচ্ছিন্ন সাইট, এগুলোও সার্চে আসে না। তাছাড়া বলতে গেলে সার্চ ইঞ্জিন টেকনোলজি এখনো তার আঁতুড় ঘর ছাড়তে পারে নি। সার্চ ইঞ্জিনগুলো Text বাদে অন্য ফরম্যাটে থাকা(যেমন ফ্ল্যাশ ফরম্যাট) ওয়েবপ্যাজ খুঁজে পায় না !
এই ডীপ ওয়েবে থাকা তথ্যগুলো সারফেস ওয়েবের তথ্য থেকে মানে গুনে এগিয়ে। এগুলো খুবই সুসজ্জিত এবং প্রাসঙ্গিক। তাহলে বুঝুন সার্চ ইঞ্জিনগুলো কি করছে !
ডার্ক ওয়েব : ইন্টারনেট জগতের অন্ধকার রাজ্য আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন