ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সময়ে জেনিসারি নামক সেনাবাহিনী ধ্বংস পতনোন্মুখ অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। চৌদ্দ শতকে অটোমান সুলতান তথা সুলতান ওসমানের জ্যেষ্ঠপুত্র সুলতান ওরখান সাম্রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধির জন্য জেনিসারি নামে একটি নতুন সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন। কিন্তু উনিশ শতকে এসে ওসমানীয় বংশীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তিকে সুসংহত করার লক্ষ্যে জেনিসারি বাহিনী ধ্বংস করেছিলেন।
জেনিসারি বাহিনীর পরিচয়
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ কর্তৃক জেনিসারি বাহিনী ধ্বংসের কারণ আলোচনার পূর্বে জেনিসারি বাহিনী সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা একান্ত আবশ্যক।
ওসমানীয় সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠাতা সুলতান ওসমানের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র ওরখান সিংহাসনে আরোহণ করে সামরিক বাহিনী সংগঠনের ব্যাপারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।তিনি অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী সৃষ্টি করেন। এ পদাতিক বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত পদাতিক বাহিনী ছিল একটি উল্লেখযোগ্য শাখা। এই নিয়মিত পদাতিক বাহিনীর কার্য্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওরখান তার ভ্রাতা আলাউদ্দিন ও সামরিক বিশেষজ্ঞ কারা খলিল জান্দারী ও খায়রুদ্দিন পাশার পরামর্শ নিয়ে ‘জেনিসারি’ নামে আর একটি নতুন সেনাদল গঠন করেন। প্রথমে এক হাজার সুদর্শন খ্রিস্টান যুবক নিয়ে এই সেনাবাহিনী গঠিত হয়। পরে প্রতি বছর এক হাজার করে খ্রিস্টান যুবক নিয়ে জেনিসারি বাহিনী গঠিত হয়। এই সকল খ্রিস্টান যুবককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে তাদেরকে সৈনিক জীবনের জন্য যত্নসহকারে শিক্ষা দেওয়া হতো। খ্রিস্টান লেখকরা এই সেনাদলকে ‘জেনিসারি’ নামে আখ্যায়িত করার পর থেকে তা ‘জেনিসারি’ নামেই অভিহিত হয়।
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সময়ে জেনিসারি নামক সৈন্যবাহিনী ধ্বংস ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য একদা জেনিসারি বাহিনী গঠন করা হলেও তা কালক্রমে সাম্রাজ্যের প্রগতির পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। আবার জেনিসারি বাহিনী ধ্বংসের মাধ্যমে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও সাম্রাজ্যের প্রগিতির পথ সুপ্রশস্ত হয়।