বিশ্ব ইতিহাসে সিরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মানব জাতির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অগ্রগতি এবং বিশ্বসভ্যতার লীলাভূমি হিসেবে এ অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাচীন মানব সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল সিরিয়া। সিরিয়ার অন্তরর্ভুক্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে জাবাল আল-দ্রুজ উল্লেখযোগ্য। মূলত এটি দ্রুজদের একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল।
জাবাল আল-দ্রুজ
জাবাল আল-দ্রুজ আরবি শব্দ, যার অর্থ দ্রুজদের পর্বত। বর্তমান সিরিয়া রাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এ অঞ্চলে দ্রুজরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। দ্রুজদের উৎপত্তি ইসলাম ধর্মের শিয়া মতবাদের অন্তর্ভূক্ত একটি বিশেষ সম্প্রদায় ইসমাইলীয়দের মধ্য থেকে। দ্রুজদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূলভিত্তি হলো, ফাতেমীয় বংশের ষষ্ঠ খলিফা আব্দুল হাকিম আল্লাহর অবতার। মুহম্মদ আল-দারাজি নামে একজন তুর্কি প্রচারক সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে এ ধারণা প্রচার করেন। যারা এ ধারণায় বিশ্বাস করে তার নামানুসারে তাদের নাম হয় দ্রুজ। দ্রুজদের আচার-আচরণ ও রীতিনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ধর্ম। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে গোপনীয়তার ভাব আছে। তাই তাদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা বাইরের লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দ্রুজদের এ স্বাতন্ত্র্যবোধ লক্ষ করে ফরাসি সরকার তাদেরকে দামেস্ক হতে পৃথক করে জাবাল আল-দ্রুজ নামে নতুন একটি রাজ্যের মধ্যে নিয়ে আসেন। স্থির হয় দ্রুজরা নিজেরাই তাদের প্রশাসনযন্ত্র পরিচালনা করবে। ম্যান্ডেটরি শাসনের পক্ষ হতে তাদেরকে কিছুসংখ্যক বিশেষজ্ঞ দিয়ে সাহায্য করা হবে। জনগণ পাঁচ বছরের জন্য একজনকে শাসক নিযুক্ত করবে। তবে একটি ফরাসি বাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি থাকবে। বর্তমানে জাবাল আল-দ্রুজ অঞ্চলটি সিরিয়ার সুরাইদা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত।
১৯২২ সালে ফরাসি সরকার জাবাল আল-দ্রুজকে দামেস্ক থেকে পৃথক করে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এ রাজ্যের অধিকাংশ অধিবাসী ছিলেন দারাজির অনুসারী বা দ্রুজ। এদের জীবন ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে ইতিহাসে জাবাল আল-দ্রুজ রাজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।