পারস্যের এক অভিজাত বংশে খাজা আবদুস সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষ সিরাজের শাসন কর্তা শাহসুজার উজির ছিলেন। পারস্যের সাফাভী বংশের চিত্রশালায় তিনি ছবি আঁকা শিখেন।
কর্মজীবন
শাহতামসপের দরবারে খাজা আবদুস সামাদ চিত্রশিল্পী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। মনে করা হয় যে, তিনি এখানে সাদীর গুলিস্তান চিত্রায়নে অংশগ্রহণ করেন।
ভারতবর্ষে আগমন
পরবর্তীকালে পারস্যে নির্বাসিত জীবন যাপনকারী মোঘল সম্রাট হুমায়ুন খাজা আবদুস সামাদের পরিচয় পেয়ে তাকে ভারতে নিয়ে আসেন। সম্রাট তাকে পাণ্ডুলিপি চিত্রায়ন, ছবি আঁকা, পুথি পুস্তক লেখা ও যুবরাজ আকবরের গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করেন। সম্রাট হুমায়ুনের আমলে ‘দস্তান-ই-আমীর হামজার’ চিত্রায়নে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সম্রাট আকবরের শাসনামলে মোঘল চিত্রকলার উন্নয়নে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তার সময় ভারতে ইন্দো-পারসিক চিত্র কলার সূচনা হয়। খাজা আবদুস সামাদের সুললিত নাসতালিক লেখায় মুগ্ধ হয়ে আকবর তাকে ‘শিরীন কলম’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এক সময় আকবর খাজা আবদুস সামাদকে রাজকীয় চিত্রশালার অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন।
১৫৫১ সালের দিকে চিত্রিত খাজা আবদুস সামাদের আঁকা একটি ছবি তেহরানের গুলিস্তান প্রাসাদে সংরক্ষিত আছে। এখানে নওরোজের দিন অর্ধদিবস সময়ে খাজা যে ছবি এঁকেছেন তাতে দেখা যায়, কিশোর আকবর খোলা আকাশে বসে ছবি আঁকছেন, সামনে তারের বাজনা বাজিয়ে চলছে সমবয়সী আর এক অজানা তরুণ। এ ছবির নিচের দিকে বিরহক্লিষ্ট মজনুর একটি ছবি আঁকা হয়েছে। মীর সৈয়দ আলীর অসমাপ্ত হামজা নামার কাজও তিনি শুরু করেন।
ওয়াশিংটনের ফ্রিয়ার গ্যালারী অব আর্টে সংরক্ষিত জাহাঙ্গীরের এ্যালবামের একটি পৃষ্ঠায় আবদুস সামাদের আঁকা পাহাড়ের পাথরের উপর লিখনরত জামশেদের ছবিতে রংয়ের ব্যবহার বিশেষভাবে চোখে পড়ার মত। সোনালি আকাশ, চিনার গাছের ডালে বসা পাখি, পাখির বাসা আর তিনটি জীবন্ত ঘোড়া। আবদুস সামাদের অন্যান্য সুপরিচিত ছবির মত এ ছবিটিও ৯৯৬ হিজরি ১৫৮৮-৮৯ সালে আঁকা।
খাজা আবদুস সামাদ মোঘল দরবারে প্রথম দিকে পারস্য রীতিতে ছবি আঁকলেও পরবর্তীকালে তিনি ভারতীয় উপাদান পরিবেশে ছবি আঁকেন। খাজা তার অঙ্কিত ছবিতে স্বাক্ষর করতেন।