ক্রিমিয়ার যুদ্ধ

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ

১৮৫৪ সালে থেকে ১৮৫৬ সালের ক্রিমিয়ার ‍যুদ্ধ ইউরোপের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পতনোন্মুখ তুরস্ক সাম্রাজ্যকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্টন করে নেওয়ার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করেই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ ইউরোপের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে।

আর এ দাবানল প্রজ্জ্বলিত হয় তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিপন্ন অস্তিত্বকে লক্ষ্য করে। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলে দুর্বল তুরস্ক সাম্রাজ্যের ভিত্তি পূর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় হয়।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ

১৮৪০ সালে লন্ডন কনভেনশনের পরে ইউরোপে শান্তি অব্যাহত ছিল। কিন্তু রাশিয়া পতনোন্মুখ তুরস্ক সাম্রাজ্যকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্টন করে নেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করলে পুনরায় নিকটপ্রাচ্য সমস্যার উদ্ভব হয় এবং এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা করে। মহারানি ভিক্টোরিয়া এক সময় এরূপ মন্তব্য করেছিলেন যে, জার প্রথম নিকোলাস ও তার অনুচরবর্গের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যেই এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল জেরুজালেম (গ্রোটোর) গির্জার অধিকার নিয়ে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব। কিন্তু রাশিয়া কর্তৃক মোলডোভিয়া অধিকার, জার কর্তৃক তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ প্রস্তাব, ইংল্যান্ডের তুরস্কের অখণ্ডতা রক্ষা করার নীতি, জার নিকোলাসের প্রতি তৃতীয় নেপোলিয়নের অসন্তুষ্টি প্রভৃতি কারণে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিক এ. জে. পি. টেইলর মনে করনে যে, এ যুদ্ধ ছিল অনিবার্য্য।

কারণ জার নিকোলাস তুরস্কের বশ্যতা চাইত, অপরদিকে তৃতীয় নেপোলিয়ন রাশিয়াকে পরাস্ত করে স্বদেশে জনপ্রিয়তা চাইতেন, ব্রিটেন চাইতেন তুরস্কের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা। এ পরস্পর বিরোধী সংঘাতে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ অনিবার্য্য হয়ে পড়ে।

১৮৫৬ সালের ৩০ শে মার্চ প্যারিসের সন্ধি দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে। এ যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার অগ্রগতি কিছুদিনের জন্যে হলেও প্রতিহত হয়, তুরস্কের সামরিক রক্ষা, ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়নের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ইংল্যান্ডের জাতীয় ঋণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এ যুদ্ধের ফলে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সার্থকতা ও যৌক্তিকতা সম্বন্ধে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মত দিয়েছেন।

রর্বাট মোরিয়ার মন্তব্য করেন যে, সম্প্রতি যে সকল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তন্মধ্যে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সর্বাধিক অনাবশ্যক ও সার্থকতাবিহীন যুদ্ধ। তবে এটি সত্য, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ প্রাচ্য সমস্যার সমাধান করতে পারে নি। এটি সাময়িকভাবে রাশিয়ার অগ্রগতিকে প্রতিহত করেছিল।

রাশিয়ার জার প্রথম নিকোলাস এবং তার অনুচরবর্গের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধটি ইউরোপের স্বার্থের জন্য সংঘটিত হয়, তুরস্কের স্বার্থের জন্য নয়। অবশেষে প্যারিস শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *