পারস্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে আঠারো শতকের শেষ দিকে কাজার বংশের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কাজার ছিল পারস্যের সাফাভি বংশের মিত্র কিজিল বংশের একটি গোত্র। শাহ আব্বাস কিজিলদের তিনটি ভাগে ভাগ করেন। আর এরই এক ভাগ গুরগান অঞ্চলে পরবর্তীকালে কাজার বংশ প্রতিষ্ঠা করে। আগা মোহাম্মদ খান ছিলেন পারস্যের কাজার বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। ১৭৯৪ সালে কাজার বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।বংশ পরস্পরায় এদের শাসনকাল ১৯২৫ সাল পযর্ন্ত স্থায়ী হয়। এভাবে ইতিহাসে কাজার বংশ স্থান করে নেয়।
কাজার বংশের পরিচয়ঃ
ইল কাজার ছিল তুর্কি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি যাযাবর জাতি। ইরানে মুঘল শাসন চলাকালে এ গোত্র ইরানে চলে আসে এবং আর্মেনিয়া এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে। শাহ ইসমাইল সাফাভি কর্তৃক ইরানে সাফাভি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকালে বিভিন্ন যাযাবর গোত্র তাকে সহায়তা করে। ইল কাজার ছিল তাদের অন্যতম। পরবর্তীকালে তারা কিজিল বাকাদের দলে শামিল হয়। ১২১০ হিজরিতে তেহরানে আগা মোহাম্মদ খানের অভিষেকের মধ্য দিয়ে ইরানে কাজার বংশের রাজত্বের সূচনা হয়। কাজার বংশ পরস্পরায় সাতজন শাহ্ ইরানের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রাজত্ব করেন। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন আগা মোহাম্মদ খান এবং সর্বশেষ আহমদ শাহ।
কাজার বংশ পারস্যের ইতিহাসে এক শতাব্দীকালের বেশি শাসন করে পারস্যের ইতিহাসে এ বংশের উত্থান যেমন আকস্মিক তেমনি পতনও আকস্মিক। কাজার বংশের মূল্যায়নে ফতেহ আলী শ্রেষ্ঠ শাসক ছিল। এক পর্যায়ে শাসকদের অত্যাচার ও বিদেশিদের সাথে সম্পর্ক এ বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজার বংশ তারপরও পারস্যের ইতিহাসে একটি স্থান দখল করে আছে। অবশেষে ১৯২৫ সালে নতুন শাসক তথা পাহলভি নামক নতুন বংশের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজার বংশের অবসান হয়। এ বংশের পতনের ফলে আবার পারস্যের ইতিহাসে নতুনত্বের সূচনা হয়।