কলিউসিভ ও নন-কলিউসিভ অলিগোপলি কি?

কলিউসিভ

অলিগোপলি বাজারের ফার্মগুলো নিজেদের মধ্যে উৎপাদন, দাম ও যোগান নিয়ন্ত্রণে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। এরূপ বাজারে ফার্মগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। ফলে এক ফার্মের আচরণ দ্বারা অপর ফার্ম প্রভাবিত হয়। কার্টেলের একটি বিশেষ রূপ হলো যৌথ মুনাফা সর্বোচ্চকরণ। অলিগোপলিতে কলিউসিভ ও নন-কলিউসিভ দুটি অবস্থা রয়েছে।

কলিউসিভ অলিগোপলিঃ

ফার্মগুলো নিজেদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দূরীকরণ, উৎপাদন, দাম ও বিক্রয় নির্ধারণে পরস্পর চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। ফার্মগুলো যদি একত্রে চুক্তিবদ্ধ হয় তাহলে তাকে চুক্তিবদ্ধ অলিগোপলি (Collusive Oligopoly) বলে। এটি দুই ধরনের হতে পারে। যথা- লিখিত ও অলিখিত চুক্তি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ্য চুক্তির মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ও দাম নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব হয় না। তাই ফার্মগুলো গোপন চুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য দাম নির্ধারণ করে থাকে। কার্টেল (Cartel) হলো কলিউসিভ অলিগোপলির একটি উদাহরণ।

কার্টেলের মাধ্যমে অলিগোপলি ফার্ম দুই ধরনের ভারসাম্য লাভ করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো যৌথ মুনাফা সর্বোচ্চকরণ (Joint Profit Maximization)। অলিগোপলি বাজারের ফার্মগুলো কোনো বাণিজ্য সংস্থা, পেশাজীবী সংগঠন অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে উৎপাদন ও দাম নির্ধারণের ব্যাপারে গোপন চুক্তিতে উপনীত হতে পারে অর্থাৎ কার্টেল গঠন করতে পারে। কার্টেলের মূল লক্ষ্য হবে যৌথ মুনাফা সর্বোচ্চকরণ।

নন-কলিউসিভ অলিগোপলিঃ নন-কলিউসিভ অলিগোপলি বলতে এমন এক অ-চুক্তিবদ্ধ অলিগোপলিকে বুঝায় যেখানে ফার্মগুলো সম্মিলিতভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় না বরং দাম নির্ধারণে কতিপয় ফার্ম নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এই নন-কলিউসিভ বলতে মূলত দাম নেতৃত্ব মডেলকে বুঝায়। চার ধরনের ফার্ম অলিগোপলিতে দাম নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে। যথা- বৃহৎ ফার্ম, ক্ষুদ্র ফার্ম, কম ব্যয়সম্পন্ন ফার্ম ও ব্যারোমেট্রিক দাম নেতৃত্ব ফার্ম।

যে ফার্ম দাম নির্ধারণ করে সে হলো দাম নির্ধারণকারী। আর অপরাপর ফার্ম অনুসরণকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। দাম নেতৃত্বের ধারণাটি অলিগোপলি বাজারের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ এ বাজারে স্বল্পসংখ্যক কিছু ফার্ম সমজাতীয় বা সামান্য পৃথকীকৃত দ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রয় নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এ বাজারে ফার্মগুলো পরম্পর নির্ভরশীল থাকে। দাম নির্ধারণের বিষয়ে এ বাজারের ফার্মগুলো অলিখিত চুক্তিতে পৌছতে পারে। এরূপ অলিখিত চুক্তি বা সমঝোতার বিশেষ রূপ হলো দাম নেতৃত্ব। দাম নেতৃত্বের ফলে একটি ফার্মের নেতৃত্ব অপরাপর ফার্মগুলো মেনে নেয়। যে ফার্ম দাম নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে তাকে নেতৃত্বদানকারী ফার্ম আর অপরাপর ফার্মগুলো অনুসরণকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।

কলিউসিভ অলিগোপলিতে কার্টেলের অধীনে বিভিন্ন ফার্মের ভারসাম্য উৎপাদন স্তরে মুনাফা নির্ধারিত হয়। কার্টেলে চুক্তিবদ্ধ হলেও অলিগোপলিতে ফার্মগুলো তাদের পণ্যের ধরন ও বিক্রয় কর্মকাণ্ড নিজেদের মতো করে অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। অর্থাৎ ফার্ম তীব্র বিক্রয় কর্মকাণ্ড অথবা অধিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য অধিক হারে বিক্রয়ের চেষ্টা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *