“ইলন মাস্ক” সাম্প্রতিক সময়ে নব দশকের প্রথম বছরের সবথেকে আলোচিত একটি নাম । বিজনেস আন্ডার ওয়ার্ল্ডে তাঁর আরেক ডাক নাম হল “দা আয়রন ম্যান”।অবিশ্বাস্য হলেও এটিই বাস্তব যে হলিউডের মার্ভেল স্টুডিও এর মত এত বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত একটি ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজিত ফিল্ম “দা আয়রন ম্যান”-চলচ্চিত্রটি ইলন মাস্কের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে । যেখানে গত শতাব্দীর সবথেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল পৃথিবীর বাইরে চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করা সেখানে একবিংশ শতাব্দীতে এসে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার মত অসম্ভব প্রায় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ইতিমধ্যে মঙ্গল গ্রহে স্পেস এক্স এর ফ্যালকন-৯ নামের একটি রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহে যে আদৌ বসবাস করা সম্ভব সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ স্বপ্নদ্রষ্টার কাতারের শীর্ষে পৌছেছেন ইলন মাস্ক ।
বাল্যকাল:

Image source : Astrum People
ইলন মাস্কের বাবা ছিলেন একজন দক্ষিন আফ্রিকান ও তাঁর মা ছিলেন একজন কানাডিয়ান নাগরিক ।ইলন মাস্কের পুরো নাম হল “ইলন রিভ মাস্ক”।ইলন মাস্ক ২৮ জুন,১৯৭১ সালে দক্ষিন আফ্রিকার প্রিটোরিয়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই ইলন মাস্কের বইয়ের প্রতি ছিল এক প্রকার আসক্তি যার ফলস্বরূপ মাত্র নয় বছর বয়সেই তিনি বত্রিশ হাজার ছয়শত চল্লিশ পৃষ্ঠার বিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বইটি যা তিনি একসময় পুরো পড়া শেষও করে ফেলেন । ইলন মাস্ক স্কুল জীবনে অনেকটাই চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন , যার অন্য বৈজ্ঞানিক অর্থ ইন্ট্রোভার্ট।যার ফলে সে একবার স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলেন। বাল্যকালেই এত শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকার পরেও কোনোভাবেই তাঁর সাফল্যের অগ্রযাত্রাকে কেউ শিকল পড়িয়ে রাখতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে নিজ থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা অর্জন করেন এবং ১২ বছর বয়সেই তিনি “ব্লাস্টার” নামক একটি ভিডিও গেম তৈরি করেন । সবথেকে মজার ব্যাপার হলো, সেই ভিডিও গেমটি তিনি একটি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে নগদ ৫০০ মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন ।
শিক্ষাজীবন:
দক্ষিণ আফ্রিকার আবশ্যক সামরিক জীবনকে “প্রত্যাহার” করে ইলন মাস্ক কানাডায় আসেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়া থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর তাঁর দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।ইলন মাস্ক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এনার্জি ফিজিক্স বিষয়ের উপর পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হন কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সে তাঁর লক্ষ্য পরিবর্তন করে ঠিক করেন যে সে পিএইচডি বাদ দিয়ে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন যার ফলস্বরূপ ইলন মাস্ক ঠিক দুই দিন পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হন।
সফলতার শুরু:
ইন্টারনেটের আগামীর রূপকথার ভবিষ্যৎ-ই প্রধানত ইলন মাস্ককে জিপ টু তৈরিতে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জুগিয়েছিল । এমন একটি সফটওয়্যার যা শহরের খবরের কাগজের জন্য ইন্টারনেট গাইড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে বিখ্যাত টেক জায়ান্ট কোম্পানি “কমপ্যাক” জিপ টু -কে অধিগ্রহণ করলে ইলন মাস্ক এই অধিগ্রহণ চুক্তির মাধ্যমে আয় করেন ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জিপ টু এর অধ্যায় শেষে ইলন মাস্ক নির্মাণ করেন “এক্স ডট কম” । এক্স ডট কম হল আমাদের দেশে বিকাশ-রকেট-নগদের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান ধারণার সূচনাকারী যা ইলন মাস্ক এক্স ডট কমের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে সর্বপ্রথম দেখিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মানি ট্রান্সেকশনের মাধ্যম “পেপ্যাল”-এ রূপ নেয় । ২০০২ সালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান “ইবে” পেপ্যালকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় যা তখনকার সময়ে ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ দরে ব্যবসায়িক অধিগ্রহণ ছিল। পেপ্যালে ইলন মাস্কের ১১.৭ শতাংশ শেয়ার থাকায় এবং সর্বোচ্চ রেকর্ডহারে অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে পেপ্যাল থেকে সেই সময় ইলন মাস্ক প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন।

Image source: Pinterest
স্পেসএক্স দিয়ে মহাকাশজয় :
ইলন মাস্কের ইচ্ছা ছিল, আন্তঃমহাদেশীয় রকেট দিয়ে তিনি ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে পৃথিবী থেকে মহাকাশে পণ্য সরবরাহ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, রকেট কেনার উদ্দ্যেশে মাস্ক উড়াল দিলেন রাশিয়ায়। কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করে বুঝলেন যে প্রত্যেকট আইসিবিএম (আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র) এর গড় মূল্য প্রায় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দুশ্চিন্তার কথা হল যা শুধুমাত্র একবারই ব্যবহারযোগ্য। এরকম অবিশ্বাস্য আকাশ ছোঁয়া দাম শুনে ইলন মাস্ক হতাশ ও হতবাক হয়ে পড়েন। যার ফলস্বরূপ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইলন মাস্ককে নিয়ে ঠাট্টা করা শুরু করে এই বলে যে , ইলন মাস্কের দ্বারা কখনই এসব রকেট কেনা সম্ভব নয়। দেশে ফিরে আসার পথিমধ্যেই মাস্ক ঠিক করেন যে তিনি নিজ মহাকাশযান প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে এমন সব রকেট নির্মাণ করবেন যা খুব সহজেই পৃথিবীর অরবিটে পাড়ি দিতে সক্ষম এবং একইসাথে যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
যার ফলস্বরূপ ইলন মাস্ক ৬ই মে ,২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স (স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলোজিস কর্পোরেশন)।

Image source: Unsplash
স্পেসএক্স এর সূচনালগ্নেই যে ইলন মাস্ক সফল হয়েছিলেন তাঁর পূর্ববর্তী জিপ টু এবং পেপ্যাল প্রজেক্টের মত এমনটা নয় বরং পরপর তিনটি ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণের পর অনেকে অনুমান করেছিলেন যে স্পেসএক্স এর অন্তিম সময় কাছে এসে পড়েছে । তবুও ইলন মাস্ক কখনই হাল ছাড়েননি। তিনি নিজের টেকনোলজির উপর শতভাগ আস্থা রেখেছিলেন কেননা তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন যে,তাঁর এই প্রযুক্তির উপর ভর করেই একসময় পৃথিবীর অধিকাংশ রকেট পাড়ি দিবে স্বপ্নিল মহাকাশে। সকল বাঁধা,ব্যর্থতা ও ঝুঁকিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-১ রকেটটি সফলভাবে ২০০৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ হয়।
স্বপ্ন যখন মঙ্গলে:

Image source: YouTube
ইলন মাস্ক মনে করতেন, মানবজাতির পদচারনা শুধুমাত্র পৃথিবীতে থাকাটা হাস্যকর, কেননা পৃথিবীর বুকে যেকোনো মহাবিপর্যয়ে নিমিষেই মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। তাই ইলন মাস্ক নিকট ভবিষ্যতেই মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন। মাস্ক মনে করতেন, পৃথিবী থেকে ৫৪.৬ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পারি দেয়ার খরচ যোগানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো রকেট পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। স্পেসএক্স তৈরি করলো ফ্যালকন-৯, ফ্যালকন হেভি, প্রস্তাব দিলো বিএফআর এর মত অত্যাধুনিক স্পেসক্রাফটের। মাস্ক ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মঙ্গল অভিযানকে বাস্তবে রূপ দিতে চান। আর ফ্যালকন-৯ থেকে শুরু করে আজকের ফ্যালকন হেভি একটা জিনিসই প্রমাণ করে, আর সেটি হল ইলন মাস্কের সেই “মিশন মার্স” এখন অনেকটাই সম্ভব। ইলন মাস্ক মিশন মার্স প্রজেক্টটি নিয়ে এতটাই আশাবাদী যে তিনি পৃথিবীতে নয় বরং মঙ্গল গ্রহে মৃত্যুবরণ করারও ইচ্ছা ব্যাক্ত করেছেন।
টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক

Image source: Shutterstock
অত্যাধুনিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান “টেসলা”-র সহ উদ্যোক্তা, প্রধান নির্বাহী ও প্রধান পণ্য পরিকল্পনাকারী হলেন ইলন মাস্ক। কোম্পানীটি শুধুমাত্র সাধারনের ক্রয়সীমায় সেরা গাড়িগুলোই বানায় না, এর সাথে সাধারন ব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিক্স, ব্যাটারী এবং সোলার রুফও প্রস্তুত করে।
প্রতিটি পণ্যের আইডিয়া সৃষ্টি থেকে শুরু করে ডিজাইন, প্রকৌশল ইত্যাদি সবই মাস্ক নিজেই পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরেই টেসলা বিশ্বের সেরা একটি স্পোর্টস কার “রোডস্টার” বাজারে নিয়ে আসে। মাত্র ৩.৭ সেকেন্ডের মধ্যেই রোডস্টার ০ থেকে এর গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারে নিয়ে যেতে সক্ষম। এছাড়াও গাড়িটি কোনওরকম জ্বালানী তেল বা গ্যাস ছাড়া শুধুমাত্র এর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীর ওপর নির্ভর করে ২৫০ মাইল পাড়ি দিতে পারে। ডেইমলারের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন ও টয়োটার সাথে কারিগরী অংশীদারিত্ব নিয়ে ২০১০ সালের জুনে টেসলা প্রথমবারের মত পাবলিক লিমিডেট কোম্পানী হিসেবে স্টক মার্কেটে নামে যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টেসলার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
কোম্পানীর প্রথম ইলেকট্রিক সিডান “Model – S” বাজারে দারুন সফলতা লাভ করে। একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ হলে এটি ২৬৫ মাইল পাড়ি দিতে সক্ষম। মোটর ট্রেন্ড ম্যাগাজিন মডেল এস কে ২০১৩ সালের সেরা গাড়ির মর্যাদা প্রদান করে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে ইলন মাস্ক টেসলা কোম্পানির নতুন দুইটি গাড়ি “টেসলা সেমি” এবং “রোডস্টার” এর পর্দা উন্মোচন করে আবারও একবার হৈচৈ ফেলে দেন। টেসলা সেমি প্রকৃতপক্ষে একটি সেমি ট্রাক যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলে গাড়িটি ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে সক্ষম এবং সেই সাথে গাড়িটির ব্যাটারি ও মোটর ১ মিলিয়ন মাইল ভ্রমণ পর্যন্ত কোনও সমস্যা ছাড়াই চলবে। রোডস্টারকে ধরা হচ্ছে আজ পর্যন্ত তৈরী হওয়া সবথেকে দ্রুতগামি গাড়ি হিসেবে। মাত্র ১.৯ সেকেন্ড সময়ে এর গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ০ থেকে ৬০ কিলোমিটারে উঠতে সক্ষম হিসেবে একে নির্মাণ করা হয়েছে ।
সোলার সিটি

Image source:Electrek
আরও বেশি মানুষের হাতে বহুব্যবহারযোগ্য জ্বালানী ও শক্তি তুলে দেয়ার এবং এই শক্তির ব্যবহারকে আরও বেশি প্রচলিত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৬ এর আগস্ট মাসে ইলন মাস্ক তাঁর ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও সৌরশক্তি উৎপাদনকারী কয়েকটি কোম্পানীর মাঝে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেন।বর্তমানে “সোলার সিটি” এবং “টেসলা” উভয় প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শেয়ারই তাঁর। বর্তমানে সবথেকে বেশি ইলেক্ট্রনিক পণ্যের পেটেন্ট এর মালিকানার রেকর্ডও টেসলার দখলে।
অন্যান্য গবেষণা ও উদ্ভাবন
স্পেস এক্স ও টেসলার বাইরেও ইলন মাস্ক সব সময়েই তাঁর উদ্ভাবনী কল্পনাগুলোকে বাস্তবে পরিনত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। তার মধ্যে কয়েকটির কথা চলুন জেনে নেয়া যাক।
হাইপার লূপ

Image source: Pinterest
২০১৩ সালের আগস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের একটি নতুন পদ্ধতির কথা প্রকাশ করেন যার নাম হল “হাইপার লূপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা খুবই কম সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। বহুব্যবহারযোগ্য শক্তিতে চালিত এবং আবহাওয়ার প্রভাবমুক্ত এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীরা ক্যাপসুলের মধ্যে অবস্থান করে একটি লো প্রেশার টিউবের নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ঘন্টায় ৭০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
নিউরালিঙ্ক

Image source: Slate.com
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে মাস্কের আগ্রহের কথা অনেকেরই জানা। তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেন এ আই এর চেয়ারম্যান। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানীটি মানবতার কল্যানে ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নের জন্য গবেষণার কাজে নিবেদিত। ২০১৭ সালে খবর প্রকাশিত হয় মাস্ক “নিউরালিঙ্ক” নামের একটি উদ্যোগকে সহায়তা করছেন যারা কিনা এমন চিপ বানানোর জন্য গবেষণা করছে যা কিনা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করে সফটওয়্যারের সাথে তার সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হবে।
দি বোরিং কোম্পানী

Image source: TechCrunch
ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের জন্য ইলন মাস্ক ২০১৭ সালে “দি বোরিং কোম্পানী” নামে একটি খননকারী প্রতিষ্ঠান শুরু করেন যার প্রথম কাজ ছিল লস এ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত স্পেস এক্স এর আওতাভূক্ত জমিতে খননকার্য চালানো। অক্টোবরের শেষের দিকে মাস্ক তাঁর ইন্সটাগ্রাম পেজে তাঁর এই কোম্পানীর কাজের অগ্রগতির ছবি পোস্ট করেন। তিনি বলেন এই পাঁচশত ফুট টানেলটি ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্টারস্টেট ৪০৫ বাইপাস সড়কের সমান আয়তনের এবং চার মাসের মধ্যে সেটি পাঁচশত ফুট থেকে দুই মাইলের একটি টানেলে পরিনত হবে।
ইলন মাস্কের সম্মানজনক স্বীকৃতি
তিনি বিজ্ঞান,প্রযুক্তি এবং ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি লাভ করেছেন । ২০১০ সালে মহাকাশ বিষয়ক রেকর্ডের জন্য প্রাইমারি ওয়ার্ল্ড সংগঠন এর পক্ষ থেকে তিনি “ফেডারেশন এয়ারোনেটিক ইন্টারন্যাশনাল” এফআই গোল্ড স্পেস পুরস্কার পান ।এছাড়াও ২০১৩ সালে “বিজনেস পার্সন অফ দা ইয়ার”হিসেবে ইলন মাস্ক ফরচিউন ম্যাগাজিনের জুরি বোর্ড দ্বারা নির্বাচিত হন ।

Image source: Evannex
২০১৬ সালে প্রথমবারের মত পৃথিবীর সেরা ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৮৩ তম ধনী হিসেবে তিনি শীর্ষ ১০০ -তে জায়গা করে নেন ।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ফোর্বস এর ৪০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ইলন মাস্ক আমেরিকার ২১ তম ধনী হিসেবে জায়গা করে নেন ।
মোট সম্পদ
সম্প্রতি ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির জরিপ মোতাবেক মাস্কের মোট সম্পদের পরিমান ১৮৮ বিলিয়ন (১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩০৯ কোটি বাংলাদেশী টাকা প্রায়) মার্কিন ডলার। ২০০২ সালে পেপ্যাল বিক্রি করার মধ্য দিয়ে ইলন মাস্ক প্রথমবারের মত বিলিয়নিয়ার ক্লাবে প্রবেশ করেন। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান “স্পেস এক্স” এর মোট সম্পদের পরিমান তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের থেকেও বেশি।
ইলন মাস্কের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান
মানবজাতির কল্যানে বিরাট সম্ভাবনাময় মহাকাশ অন্বেষণ এবং মানবজাতির স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত করাই মাস্কের কাজের প্রধান অনুপ্রেরণা। এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনি মাস্ক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন যা মহাকাশে নতুন সম্ভাবনার খোঁজ এবং বহুব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস খুঁজে বের করার কাজে নিবেদিত।
শেষ কথা
ইলন মাস্ক তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের জীবনকে আরও সহজ করা এবং পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের জগতকে মানুষের জন্য বসবাসের আরও উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়াসে। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর স্বপ্নের আরও কাছে এগিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো তাঁর হাত ধরেই আমরা একদিন মানবজাতির ভিন গ্রহে বসবাসের বহু বছরের লালিত স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখবো। এই প্রখর প্রতিভাবান ও অসাধারন সফল মানুষটির জীবন থেকে আমরা সবথেকে বড় যে শিক্ষাটি নিতে পারি তা হল স্বপ্ন যত বড়ই হোক, বিশ্বাসের সাথে কাজ করে গেলে সাফল্য আসবেই।
স্যাটেলাইট সম্পর্কে অজানা সব তথ্য আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন