ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতি কি বোঝ?

ইতিবাচক ও নীতিবাচক

অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতির বিষয়বস্তুকে দুই ভাগে বিন্যস্ত করেছেন- ইতিবাচক অর্থনীতি ও নীতিবাচক অর্থনীতি। ইতিবাচক অর্থনীতিতে বাস্তব জীবনের অর্থনৈতিক সমস্যাবলির এমন সব দিক নিয়ে আলোচনা কর হয়, যেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যথার্থতা প্রমাণ করা যায়। আর নীতিবাচক অর্থনীতি যুক্তি ও সামাজিক কল্যাণের সাথে জড়িত।

ইতিবাচক অর্থনীতিঃ

যে অর্থনীতিতে মানবজীবনের সামাজিক আচরণসমূহকে ব্যাখ্যা করে এবং যাকে বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায় তাকে ইতিবাচক অর্থনীতি বলে। ইতিবাচক অর্থনীতিতে যে বিষয়গুলো আলোচিত হয় তা বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান থেকে উদ্ভুত। এর প্রতিটি বিষয়কে বৈজ্ঞানিক যুক্তির নিরিখে যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করা সম্ভব। অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ইতিবাচক অর্থনীতিতে পর্যালোচনার আশ্রয় নেওয়া হয়। এতে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণকে কাজে লাগানো হয়।

ইতিবাচক অর্থনীতিতে মানব সমাজের সামাজিক ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। কি উৎপাদন করা হবে, কিভাবে উৎপাদন করা হবে এবং কার জন্য উৎপাদন করা হবে এ বিষয়গুলোর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ইতিবাচক অর্থনীতির আওতাভুক্ত। যেমন-সরকার কোন কোন নীতি দ্বারা বেকারত্ব দূর করবে, কিভাবে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে, কিভাবে সরকার ঘাটতি ব্যয় দূর করবে ইত্যাদি বিষয় ইতিবাচক অর্থনীতির আওতাভুক্ত। ইতিবাচক অর্থনীতিতে এমন সব বিষয় আলোচিত হয়, যা বাস্তব তথ্য দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব।

অধ্যাপক এল. রবিন্স ও অন্যান্য আধুনিক অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিকে ইতিবাচক ও বাস্তবভিত্তিক শাস্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। এল. রবিন্সের মতে, “যা ঘটছে এবং ঘটেছে তা নিরপেক্ষভাবে আলোচনা করা এবং তার কার্য্যকলাপ বিশ্লেষণ করাই অর্থনীতির কাজ। কি হওয়া উচিত, কোন কাজ করা ভালো বা মন্দ তা বিচার-বিবেচনা করা অর্থনীতির কাজ নয়।” এল. রবিন্স আরো বলেন, “নীতিকথার বিতর্ক পরিহার করে বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই অর্থনীতিবিদদের মূল কাজ।” লর্ড কেইনসের মতে, “অর্থনীতিবিদদের কাজ হলো শুধু কারণ অনুসন্ধান করা, কোনো সংস্কারের গুরুত্ব ও দায়িত্ব বহন করা নয়।”

নীতিবাচক অর্থনীতিঃ

অর্থনীতির যে অংশে এমন সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা নীতি ও সমাজ কল্যাণমূলক বিষয়ের সাথে জড়িত তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি বলে। নীতিবাচক বক্তব্যে যে বিষয়গুলো আলোচিত হয় তা নীতিবোধের মাপকাঠিতে আলোচিত হয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো নীতিবোধ, দর্শন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত থাকে। ফলে বাস্তব লব্ধ জ্ঞান ও তথ্য দ্বারা এদের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। নীতিবাচক অর্থনীতিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আলোচনার আশ্রয় নেওয়া হয়। আলোচনার দ্বারা সমস্যার সমাধানে নীতি ও যুক্তি ছাড়া তেমন কোনো তথ্য প্রমাণ কাজে লাগে না।

নীতিবাচক অর্থনীতিতে এমন সব বিষয় আলোচিত হয়, যেখানে নীতির প্রশ্নে কোনটা উচিত এবং কোনটা অনুচিত এ বিষয়গুলো জড়িত থাকে। যেমন- বেকারত্বের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ভালো, ঘাটতি বাজেটের চেয়ে উদ্বৃত্ত বাজেট ভালো, আয় বন্টনে অসমতার চেয়ে সমতা আনয়ন করা ভালো ইত্যাদি বিষয় নীতিবাচক অর্থনীতিতে যুক্তির নিরিখে আলোচিত হয়। নীতিবাচক অর্থনীতি বস্তুত কল্যাণমূলক ধারণার সাথে সম্পৃক্ত।

অর্থনীতি শুধু ইতিবাচক বিজ্ঞানই নয়, নীতিবাচক বিজ্ঞানও বটে। কারণ সমাজের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করা অর্থনীতির মূল কাজ। ইতিবাচক অর্থনীতির বিভিন্ন সূত্র বাস্তবে প্রয়োগ করে এ কাজ সম্পাদন করতে হয়। নীতিবাচক অর্থনীতি এ সূত্রগুলোর যথাযথ ব্যবহারে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *