আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন আমির। তিনি ছিলেন প্রদেশের খলিফার প্রতিনিধি অন্য কথায় প্রাদেশিক প্রধান। আমির সরাসরি খলিফার নিকট দায়ী থাকতেন। আমির ছিলেন প্রাদেশিক প্রশাসনের কেন্দ্র বিন্দু। প্রদেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেন্দ্র বিন্দু।
আমিরের নিয়োগ পদ্ধতিঃ
আমিরকে নিয়োগ দান করতেন স্বয়ং খলিফা কিংবা কখনো খলিফার উজির (মন্ত্রী)। আমিরকে সামরিক এবং শাসন ব্যাপারে যোগ্য হতে হতো। খলিফা কিংবা উজির আমিরকে পদচ্যুত করতে পারতেন। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা এবং শরিয়ত বিরোধীকাজের জন্য খলিফা প্রাদেশিক আমিরকে পদচ্যুত করতেন।
আমিরদের শ্রেণিবিভাগঃ
প্রাদেশিক আমিরদের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্যাবলীর ভিত্তিতে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল মাওয়াদি আমিরদেরকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথা-
- ১. অসীম ক্ষমতার প্রাদেশিক আমির
- ২. সীমাবদ্ধ ক্ষমতার প্রাদেশিক আমির ও
- ৩. ক্ষমতা দখলকারি প্রাদেশিক স্বাধীন আমির।
দুর্বল খলিফাগণ আপনজন কিংবা দক্ষ ব্যক্তিকে অসীম ক্ষমতা দিয়ে প্রাদেশিক আমির নিয়োগ করতেন। দক্ষ ও প্রতাপশালী খলিফাগণ সীমিত ক্ষমতা দিয়ে আমির নিয়োগ করতেন। আর রাজধানীর দূরবর্তী প্রদেশে অনেক সময় বল প্রয়োগে স্বাধীন আমিরগণ প্রদেশ শাসন করতেন।
আমিরের কার্যাবলীঃ
আমিরের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ছিল অনেকাংশেই কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রধান খলিফার কার্যাবলীর মত। প্রদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, জনগণের জান-মালের হেফাজত করা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং উন্নয়ণমূলক কর্মকাণ্ড দেখা শুনার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত ছিল। আল মাওয়াদীর বিবরণ অনুযায়ী, “আমির একাধারে প্রদেশের সামরিক, বেসামরিক, রাজস্ব, বিচার এবং ধর্মীয় বিষয়াদির প্রধান ছিলেন।” প্রাদেশিক সেনাবাহিনীর পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমিরের। প্রদেশে কর্মরত কাজীদের কার্যাবলী তিনি তত্ত্বাবধান করতেন। প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজস্ব ধার্য্য, আদায় ও ব্যয়ের তত্ত্ববধানও তার উপর ন্যস্ত ছিল। ইসলাম বিরোধীদের অপপ্রচার রোধ, প্রদেশের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমা ও দু’ ঈদের নামাজ পরিচালনা এবং হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় ডেলিগেশন প্রেরণ তার ধর্মীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল।