অসহযোগ আন্দোলন কি?

অসহযোগ আন্দোলন

পলাশির আম্রকাননে বাংলা-বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করে মুর্শিদাবাদের মসনদে ইংরেজ রাজত্বের বীজ বপন করা হয়। এভাবে উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কালো থাবা প্রসার লাভ করতে থাকে ধীরে ধীরে। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে বহু বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল। তন্মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন অন্যতম।

অসহযোগ আন্দোলন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয়দের সাহায্য-সহযোগিতা ব্রিটিশ সরকারের জন্য অপরিহার্য্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ১৯১৬ সালের লক্ষৌ চুক্তির ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায় তথা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ যৌথভাবে ভারতবর্ষে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে পর্যায়ক্রমে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের আশ্বাসবাণী প্রদান করে যুদ্ধে ভারতীয়দের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ১৯১৯ সালে যে ভারত শাসন আইন প্রণীত হয় তাতে ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে নি। উপরন্ত ঐ বছরই কুখ্যাত ‘রাউলাট আইন’ পাস করে ব্রিটিশ সরকার। ভারতীয়দের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়ার আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভারতীয়দের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নমূলক এ আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন নামে খ্যাত।

উনিশ শতকের প্রথমদিকে ইংরেজ বিরোধী যে সকল আন্দোলন গড়ে উঠে তার মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন ছিল অন্যতম। সঠিক পরিচালনার অভাবে তা শেষ পযর্ন্ত ব্যর্থ হয়। তথাপি এ আন্দোলনের গুরুত্ব কম একথা বলা যায় না। কেননা এ আন্দোলন ভারতীয়দের মনে প্রচণ্ড জাতীয়তাবোধ সঞ্চার করে। ভারতীয় রাজনীতির পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে এ আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য্ ছিল অসামান্য।