অর্থনৈতিক মডেল কি?

অর্থনৈতিক মডেল

সাধারণত অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে বিভিন্ন চলকের ব্যবহার হয় এবং এ চলকগুলো ফার্ম, পরিবার, ব্যবসা খাত, সরকার ও অর্থনীতির অপরাপর খাতের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করে। অর্থনৈতিক মডেলগুলো ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক এ দুই ভাগে বিভক্ত। ব্যষ্টিক অর্থনীতি ভোক্তা, উৎপাদক, ফার্ম, শিল্প ইত্যাদির আচরণ বিশ্লেষণ করে। ব্যষ্টিক মডেল দুই ধরনের হতে পারে। স্থির মডেল ও গতিশীল মডেল।

অর্থনৈতিক মডেলঃ

নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন চলকের দ্বারা নির্দেশিত অর্থনৈতিক সম্পর্কের সংঘবদ্ধ রূপায়ণকে অর্থনৈতিক মডেল বলে। অর্থনৈতিক কার্যাবলি বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন চলকের সাহায্য নেওয়া হয়। এসব চলক ফার্ম, পরিবারবর্গ, সরকার, ব্যবসা খাত ইত্যাদি বিষয়গুলোর সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটায়। অর্থনীতিবিদগণ এসব চলকের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এছাড়াও বিবেচনাধীন চলকগুলোর অতীত ও বর্তমান আচরণ পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে এদের ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করেন।

অর্থনীতি একটি সামাজিক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো এর প্রতিটি তত্ত্বকে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ এখানে নেই। এর বিকল্প হিসেবে অর্থনীতিবিদগণ মডেল ব্যবহার করে বিভিন্ন তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। সুতরাং অর্থনৈতিক মডেল হলো বাস্তব জগতের সংক্ষিপ্ত ও সরল রূপ। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আচরণ প্রতিফলিত করার পাশাপাশি যতটা সম্ভব নির্ভুল পূর্বাভাস প্রদান।

ব্যষ্টিক মডেলঃ

ব্যষ্টিক মডেল বলতে এমন একটি সহ-সমীকরণ পদ্ধতিকে বুঝায় যেখানে বিভিন্ন ব্যষ্টিক চলক একে অপরের সাথে অপেক্ষকের ভিত্তিতে সম্পর্কযুক্ত থাকে। যদি এক বা একাধিক চলকের মধ্যে পরিবর্তন হয় তাহলে অপরাপর চলকের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে এর ভিত্তিতে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌছৈানো সম্ভব হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যষ্টিক মডেলের মধ্যে বাজার মডেল, ভোক্তার উপযোগ সর্বোচ্চকরণ মডেল এবং মুনাফা সর্বোচ্চকরণ মডেল ইত্যাদি অন্যতম। ব্যষ্টিক মডেল দুই ধরনের হতে পারে। যথা- (ক) স্থির মডেল (খ) গতিশীল মডেল।

(ক) স্থির মডেলঃ

কোনো নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্যষ্টিক চলকের আচরণ ও ভারসাম্য ব্যাখ্যা করা হলে তাকে স্থির মডেল (Static model) বলে। যেমন- বাজার ভারসাম্য মডেল।

(খ) গতিশীল মডেলঃ

সময় ব্যবধানের ভিত্তিতে ব্যষ্টিক মডেলের চলকগুলো পর্যালোচনা ও ভারসাম্য ব্যাখ্যা করা হলে তাকে গতিশীল মডেল (Dynamic model) বলে। যেমন- কবওয়েব মডেল।

সামষ্টিক মডেলঃ

সামষ্টিক চলকগুলোর সমন্বয়ে যখন কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে গাণিতিকভাবে বা চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করে সম্পর্ক নির্দেশ করে ভারসাম্যাবস্থায় উপনীত হওয়ার সুযোগ থাকে, এর সমন্বিত রূপকে সামষ্টিক মডেল বলে। সামষ্টিক মডেলের ব্যবহৃত চলকগুলো বিস্তৃত ধরনের হয়। যেমন- জাতীয় আয়ের ভারসাম্য মডেল, IS-LM মডেল ইত্যাদি।

ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন তত্ত্ব বিশ্লেষণে যেসব চলক ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে পর্যালোচনা করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌছা যায়। বাজার ভারসাম্যের শর্তানুযায়ী চাহিদা ও যোগান পরস্পর সমান হয়। যেকোনো অর্থনৈতিক মডেল স্থির ও গতিশীল-এ দুই ধরনের হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *